শহীদুল জহির ছিলেন বাংলাদেশী ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, এবং সরকারি ঊর্ধ্বতন আমলা। তিনি বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তবতার অন্যতম প্রবর্তক এবং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি লেখক হিসেবে বিবেচিত। স্বকীয় ভাষাবিন্যাস এবং রীতি-ব্যবহার করে গল্প বলার নয়াকৌশলের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে তিনি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি যোগ করেছেন স্বতন্ত্র রীতি-পদ্ধতি, যা "শহীদুল জহিরীয়" ধারা বা প্রবণতা হিসেবে পরিচিত। তেইশ বছর বয়সে তিনি গল্প লেখা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তার প্রথম প্রকাশিত লেখা "ভালবাসা" গল্পটি প্রকাশিত হয়। জহিরের সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য স্বদেশ, রাজনৈতিক, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাংলা ছোটগল্পে তিনি যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা। তার গল্পসংকলন পারাপার (১৯৮৫), ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প (২০০০), এবং ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প (২০০৪)। তার রচিত গল্পসমূহ ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং বিশ্লেষিত হয়েছে। "ভালবাসা" (১৯৮৫), "পারাপার" (১৯৮৫), "আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই" (২০০০), "কাঠুরে ও দাঁড়কাক" (১৯৯২), "ডুমুরখেকো মানুষ" (২০০০), "এই সময়" (২০০০), "কাঁটা" (২০০০), "চতুর্থ মাত্রা" (২০০০), "কোথায় পাব তারে" (২০০৪), "ডলু নদীর হাওয়া" (২০০৪) প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গল্প। জহিরের জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা (১৯৮৭) তার জাদুবাস্তবতাবাদী রচনার অন্যতম সংযোজন, যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য দলিল হিসাবে বিবেচিত। মৃত্যুর পর প্রকাশিত তার সর্বশেষ উপন্যাস আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু (২০০৯), প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৫ পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও সে রাতে পূর্ণিমা ছিল (১৯৯৫) এবং মুখের দিকে দেখি (২০০৬) উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যে অনন্য সংযোজন হিসেবে আলোচিত হয়। জীবদ্দশায় সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৪ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার এবং কাগজ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার রচনা একাধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে, তার সৃষ্টিকর্মের অভিযোজনে নির্মিত হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ও মঞ্চনাটক। জহির ছিলেন চিরকুমার। ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। (বাকি অংশ পড়ুন...)