ইরাক-কুয়েত সম্পর্ক

ইরাক এবং কুয়েত এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক সর্বদাই দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে এসেছে। এর প্রধান কারণ হল, তেলের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং ইরাকের ঋণ। কুয়েতের স্বাধীনতার পর থেকেই, ইরাক এবং কুয়েত, এই দুই দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল সম্পর্ক বিরাজ করছে।

ইরাক-কুয়েত সম্পর্ক
মানচিত্র Iraq এবং Kuwait অবস্থান নির্দেশ করছে

ইরাক

কুয়েত

ইতিহাস

সম্পাদনা

২০০৪ সাল পর্যন্ত, ইরাক এবং কুয়েতের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল তিক্ত এবং ইরাক সর্বদাই, কুয়েতের উপর নিজেদের ঐতিহাসিক দাবি তুলে এসেছে। ১৯৬১ সালে কুয়েত স্বাধীনতা লাভ করে। সে সময় থেকেই ইরাকি সরকার, বিভিন্ন সময়ে কুয়েতের উপর নিজেদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেছে এবং কুয়েতকে ইরাকের বর্ধিত অংশ হিসেবে যুক্ত করার দাবি তুলে এসেছে। ১৯৬১ সালে এরকম একটি ক্ষণস্থায়ী সংকট দেখা দেয়। সে সময় ইরাকি সরকার, কুয়েত আক্রমণের হুমকি দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত আরব লিগ, ইরাকের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত আন্তর্জাতিক বাহিনী গড়ে কুয়েতের পক্ষ নেয়ার কথা বললে, সেই সময়ের মত সংকট দূর হয়।[][]

১৯৭৩ সালের ২০ মার্চ আরেকটি সংকট এর সূচনা হয়। এ সময়, ইরাকের সেনাবাহিনী, কুয়েত সীমান্তের নিকটে অবস্থিত এল-সামিতাহ দখল করে নেয়। এটি পরবর্তীতে একটি আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নেয়।[] যদিও, পরবর্তীতে সৌদি আরব এর চাপের মুখে, ইরাক তাঁদের সৈন্য ফেরত নিতে বাধ্য হয়।

১৯৯০ সালে, ইরাক, কুয়েতকে তেল চুরির দায়ে অভিযুক্ত করে। ইরাকের এই অভিযোগে বলা হয়েছিল আনুভূমিকভাবে খননের মাধ্যমে কুয়েত, ইরাকের অভ্যন্তর হতে তেল উত্তোলন করত। যদিও এই কুয়েত এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। তবে ধারণা করা হয়, এটি ছিল কুয়েত আক্রমণের জন্য ইরাক সরকারের একটি অজুহাত। তবে, সাদ্দাম হুসাইন এর কুয়েত আক্রমণের পরিকল্পনা, মূল আক্রমণের মাত্র কয়েক মাস আগে হয়েছিল।[] এছাড়াও কুয়েতে আক্রমণের পিছনে ইরাকের আরও কয়েকটি কারণ ছিল। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের সময়, বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁরা প্রায় ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি) মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছিল এবং সেটি শোধে তাঁরা অক্ষম ছিল। আবার, কুয়েতে তেলের অত্যুৎপাদন এর ফলে, ইরাকের তেল সংক্রান্ত আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছিল।[]

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক, কুয়েতে আক্রমণ করে। কিন্তু এই যুদ্ধ ২ দিন স্থায়ী ছিল। কারণ কুয়েতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং পার্শ্ববর্তী দেশ সৌদি আরব এবং বাহরাইন এ আশ্রয় নেয়। ফলে, ইরাক কুয়েতের অধিকার নিয়ে নেয় এবং কুয়েতকে ইরাকের ১৯ তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে।

উপসাগরীয় যুদ্ধ এর পরই কুয়েত তাঁদের স্বাধীনতা ফিরে পায়। সেই যুদ্ধে, ইরাকি বাহিনী, যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হলে, ইরাক কুয়েতের উপর তাঁদের অধিকার হারায়। অপদিকে ২০০৪ সালে ইরাকে বাথ পার্টির শাসনাবসান এর পর থেকেই ইরাক এবং কুয়েতের মধ্যে সম্পর্কের দৃশ্যমান উন্নতি হয়।

২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল, কুয়েতের আইনপ্রণেতা সালেহ আশুর, ইরাকের রাজধানী বাগদাদ-এ কুয়েতের দূতাবাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং তিনি তাঁর বক্তৃতায় ইরাকের তৎকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেন। যদিও, সে সময় এই প্রস্তাব সমর্থন পায় নি। কারণ কুয়েতের শীর্ষপর্যায় থেকে মনে করা হত, তখন, দূতাবাস খোলাটা বেশি জলদি হয়ে যাবে এবং সে সময় ইরাকের নিরাপত্তাও ভাল ছিল না। তাই কুয়েত, ইরাকের নিরাপত্তা অবস্থার উন্নতির জন্য অপেক্ষা করা সিদ্ধান্ত নেয়।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Helene von Bismarck, "The Kuwait Crisis of 1961 and its Consequences for Great Britain’s Persian Gulf Policy" British Scholar, vol. II, no. 1 (সেপ্টেম্বর ২০০৯) পৃ. ৭৫-৯৬
  2. "Independence for Kuwait: UK protection withdrawn" দ্যা গার্ডিয়ান, জুন ২০, ১৯৬১
  3. US diplomatic cable mentioning the incident
  4. গেজ, এফ. গ্রেগরি, III (২০০৫)। "The International Politics of the Gulf" in Louise Fawcett (ed.), "International Relations of the Middle East"। অক্সফোর্ড: দ্যা ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 263–274। আইএসবিএন 0-19-926963-7 
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১২-০২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা