ইফতেখার আলি খান পতৌদি
ইফতিখার আলী খান পটৌদী[ক] (হিন্দি: इफ़्तिख़ार अली ख़ान पटौदी, উর্দু: افتخار علی خان پٹودی, ; ১৬ই মার্চ ১৯১০ – ৫ই জানুয়ারি ১৯৫২) পটৌদীর অষ্টম নবাব ছিলেন। ইংল্যান্ড ও ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।[১][২] এছাড়াও তিনি ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার পুত্র পতৌদি’র নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি মনসুরও পরবর্তীকালে ভারত ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দেন যা ভারতের পিতা-পুত্রের অধিনায়ক হবার একমাত্র নজির।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | মুহম্মদ ইফতিখার আলী খান সিদ্দিকী পটৌদী | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | পটৌদী, পাঞ্জাব প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান হরিয়াণা, ভারত) | ১৬ মার্চ ১৯১০|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৫ জানুয়ারি ১৯৫২ নয়াদিল্লি, ভারত | (বয়স ৪১)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | প্যাট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৬ ফুট ০ ইঞ্চি (১.৮৩ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | মনসুর আলী খান পটৌদী (পুত্র) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৬৫/৩২) | ২ ডিসেম্বর ১৯৩২ ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২০ আগস্ট ১৯৪৬ ভারত বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৪৫-৪৬ | দক্ষিণ পাঞ্জাব | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩২-১৯৩৮ | ওরচেস্টারশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৮-১৯৩১ | অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ অক্টোবর ২০১৪ |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাইফতিখার আলি খান দিল্লিতে অবস্থিত পতৌদি নবাব পরিবারের বাসগৃহ পতৌদি হাউজে জন্মগ্রহণ করেন। পতৌদি’র নবাব মুহাম্মদ ইব্রাহিম আলি খান ও লোহারুর নবাবের কন্যা শাহার বানু বেগমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন তিনি। এদিক দিয়ে তিনি উর্দু কবি মির্জা গালিবের আত্মীয়। পাশাপাশি পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী হওয়া লিয়াকত আলি খানেরও আত্মীয় হন তিনি। ১৯১৭ সালে পিতার মৃত্যুর পর নবাব পদবী ধারণ করেন ও ডিসেম্বর, ১৯৩১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শাসক মনোনীত হন। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়া ভারতের অংশ হয় তার রাজ্য। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে আমৃত্যু ভারতের বৈদেশিক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
লাহোরের চিফ’স কলেজে (পুণঃনামাঙ্কিত এইটচিসন কলেজ) ও অক্সফোর্ডের বলিওল কলেজে অধ্যয়ন করেন তিনি।
খেলোয়াড়ী জীবন
সম্পাদনাইফতিখার আলি খান ভারতের একটি বিদ্যালয়ে অক্সফোর্ডের ক্রিকেটার এম. জি. স্ল্যাটার ও পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে ফ্রাঙ্ক ওলি’র কাছ থেকে ক্রিকেটে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯২৭ সালে অক্সফোর্ডে চলে যান। ব্লু অর্জনের দুই বছর পূর্বে কেমব্রিজের বিপক্ষে ১০৬ ও ৮৪ রান করে দলকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। ১৯৩১ মৌসুমে অক্সফোর্ডের পক্ষে ৯৩ গড়ে ১,৩০৭ রান করেন। ঐ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় অ্যালান র্যাটক্লিফ কেমব্রিজের পক্ষে ২০১ রান করে নতুন রেকর্ড গড়েন। পতৌদি ঘোষণা করে অল্প কয়েকদিন পরই অপরাজিত ২৩৮* রান করেন যা ২০০৫ সাল পর্যন্ত অক্ষত ছিল। ১৯৩২ সালে ওরচেস্টারশায়ার দলে খেলার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু তিন খেলার ছয় ইনিংসে তিনি মাত্র ৬৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাতিনি ১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ সময়কালের মধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে খেলেছেন। এরফলে তিনি স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে দুই দেশের পক্ষেই টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। ভারত ও ইংল্যান্ড - উভয় দলের একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ভারতের পক্ষে তিন টেস্টে অধিনায়কত্বসহ ইংল্যান্ডের পক্ষে তিন টেস্ট খেলেছেন।
টিচ ফ্রিম্যানের সাথে লর্ডসে জেন্টলম্যানের পক্ষে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন ও শীতকালে অ্যাশেজ সফরের জন্য মনোনীত হন। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে রঞ্জিতসিংজি’র পথ ধরে তিনিও সেঞ্চুরি করেন। সিডনিতে অনুষ্ঠিত তার অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ড ১০ উইকেটে জয় পায়। দলনায়ক ডগলাস জারদিনের বডিলাইন কৌশলের সাথে একাত্মতা পোষণ করেননি তিনি। মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে ১৫ ও ৫ রান করেন। এরপর সিরিজের আর কোন টেস্টে তার ঠাঁই হয়নি।[৩]
জুন, ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনি তার তৃতীয় ও শেষ টেস্টে অংশ নেন। ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন।
অধিনায়কত্ব
সম্পাদনা১৯৩২ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার উদ্দেশ্য নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করে। ভারত দল লর্ডসে তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অংশ নেয়। ঐ দলে তাকে সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তিনি নিজ নাম প্রত্যাহার করে নেন। প্রতিপক্ষীয় দলগুলোর বিপক্ষে তিনিসহ দিলীপসিংজী ভারতের পক্ষে অংশগ্রহণ করেননি। তবে, তারা নিজ কাউন্টি দল সাসেক্স ও ওরচেস্টারশায়ারের সদস্যরূপে খেলেছিলেন।[৪]
প্রকৃতপক্ষে ১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হলেও শেষ মুহূর্তে শারীরিক সমস্যায় নাম প্রত্যাহার করেন। অবশেষে, ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে তিনি দলের অধিনায়ক হন। মার্চ, ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়কের মর্যাদা উপভোগ করছেন।[৫] সফরে তার গড় ৪৬.৭১ হলে ৫ ইনিংসে মাত্র ৫৫ রান করেন। এরফলে তার অধিনায়কত্ব নিয়ে সমালোচনা হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৩৯ সালে ভোপালের নবাব হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয়া কন্যা সাজিদা সুলতানকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির তিন কন্যা ছিল। নিজ পুত্রের একাদশ জন্মদিনে ৫ জানুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে পোলো খেলা অবস্থায় হৃদযন্ত্রক্রীড়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র পতৌদি’র নবম নবাব হন। এছাড়াও ইফতিখার বলিউডের সাইফ আলি খান ও সোহা আলি খানের দাদা হন।
সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৩২ সালে বিল বোস, স্টুই ডেম্পস্টার, জেমস ল্যাংগ্রিজ ও হেডলি ভেরিটি’র সাথে তিনিও উইজডেন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হন।[৬]
২০০৭ সালে ভারত ক্রিকেট দলের টেস্ট অভিষেকের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব পতৌদি’র নামকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মারক ট্রফির প্রচলন করে যা ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজগুলো পতৌদি ট্রফি নামে পরিচিতি পায়।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Mumbai players". www.cricketarchive.com. Retrieved 12 October 2014.
- ↑ "Bombay players". www.cricketarchive.com. Retrieved 12 October 2014.
- ↑ Frith, p. 118.
- ↑ Guha, Ramachandra (২০০২)। A Corner of a Foreign Field – The Indian History of a British Sport। London: Picador। পৃষ্ঠা 194। আইএসবিএন 0-330-49117-2।
- ↑ "Records / Test matches / Individual records (captains, players, umpires) / Youngest captains". ESPN Cricinfo, সংগৃহীত: ৭ মার্চ, ২০১৭।
- ↑ "Full List of Wisden Cricketer of the Year on Cricinfo"। espncricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "The Pataudi Trophy"। Floreat Domus। Balliol College, Oxford। সংগৃহীত: ৭ মার্চ, ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ইফতেখার আলি খান পতৌদি (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে ইফতেখার আলি খান পতৌদি (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- Resume of cricketing career
- Genealogy of the ruling chiefs of Pataudi
- Genealogy of the ruling chiefs of Bhopal
- Mihir Bose, ‘Khan, Muhammad Iftikhar Ali, nawab of Pataudi (1910–1952)’, Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press, 2004; online edn, Jan 2011 accessed 22 May 2012
পূর্বসূরী বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজকুমার |
ভারত জাতীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৪৬ |
উত্তরসূরী লালা অমরনাথ |
পূর্বসূরী নবাব মুহাম্মদ ইব্রাহিম আলি খান |
পতৌদি’র নবাব ১৯১৭-১৯৫২ |
উত্তরসূরী নবাব মনসুর আলি খান |
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি