আসরের নামাজ (আরবি: صلاة العصر; সালাতুল আসর) মুসলিমদের অবশ্য পালনীয় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্যতম। নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। দৈনিক নামাজগুলোর মধ্যে এটি তৃতীয়। এটি বিকেলের সময় আদায় করা হয়। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত এর সময় থাকে।

আসরের নামাজের নিয়ত​

সম্পাদনা

নিয়ত অর্থ সংকল্প। সালাতের শুরুতে নিয়ত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, সকল কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ই পাবে, যার জন্য সে নিয়ত করবে। (সহীহ বুখারী ও মিশকাত -এর ১ম হাদীছ) অতএব সালাতের জন্য ওযু করে পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন পোশাক ও দেহ-মন নিয়ে কা’বা গৃহ পানে মুখ ফিরিয়ে মনে মনে সালাতের দৃঢ় সংকল্প করে স্বীয় প্রভুর সন্তুষ্টি কামনায় তার সম্মুখে বিনম্র চিত্তে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সালাতে এর কোন স্থান নেই। অনেকে সালাত শুরুর আগেই জায়নামাজের দোয়া মনে করে ইন্নী ওয়াজ্জাহতু…পড়েন। এই রেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাপ। মূলত জায়নামাজের দোয়া বলে কিছু নেই।[]

৪.২. তাকবীরে তাহরীমা​

সম্পাদনা

ওযু করার পর সালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে দুই হাতের আংগুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবে ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)। অতঃপর বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে দন্ডায়মান হবে।

ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপর রাখলেন।

ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাউদ হা/৭৫৫, ইবনু মাসঊদ হতে; ঐ, হা/৭৫৯

৪.৩. ছানা​

সম্পাদনা

ছানা অর্থ প্রশংসা। এটা মূলতঃ দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বা সালাত শুরুর দো’আ; বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্র চিত্তে নিম্নোক্ত দোআর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা‘আদতা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাককিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাককৃাছ সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গুনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গুনাহ সমূহ হতে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ, আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে সাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।

একে ‘ছানা বা দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো’আও রয়েছে। তবে এই দো’আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

৪.৪. সূরায়ে ফাতিহা পাঠ​

সম্পাদনা

দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা’ পড়ে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাকাতে কেবল বিসমিল্লাহ বলবে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলবে।

৪.৫. কিরাআত​

সম্পাদনা

সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দু’রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আসরের সালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দু’রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দুই রাকাতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।

৪.৬. রুকু​

সম্পাদনা

কিরাআত শেষে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফউল ইয়াদায়েন করে রুকুতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দুই হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দো’আ পড়বে।

রুকুর দো’আ : সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে।

৪.৭. কওমা​

সম্পাদনা

অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর ‘কওমা’র দো’আ একবার পড়বে।

কওমার দোয়া : রাব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বে- রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। কওমার জন্য অন্য দোয়াও রয়েছে।

৪.৮. সিজদা​

সম্পাদনা

কওমার দো’আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি দুআ পড়বে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী করে মাথার দুই পাশে কাধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নিচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মতো ফাঁকা থাকে। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থির ভাবে বসে দোয়া পড়বে। অতঃপর আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দোয়া পড়বে। রুকু ও সিজদায় কুরআনী দু’আ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাকাতে দাঁড়ানোর প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরাহাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

সিজদার দো’আ : (সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা) অর্থ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ। কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকু ও সিজদার অন্য দো’আও রয়েছে।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো’আ : উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহানী ওয়াজ বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আফিনী ওয়ারঝুকুনী। অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রুযী দান করুন।

তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮; আবু দাউদ হা/৮৫০

৪.৯. বৈঠক​

সম্পাদনা

দুই রাকাত পড়ার পর বৈঠক করতে হবে। বৈঠকে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো’আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশি বেশি করে অন্য দোয়া পড়বে। শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এ সময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুসল্লির নজর ইশারার বাইরে যাবে না।

৪.৯.১. তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):​

সম্পাদনা

উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।। অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (বুঃ মুঃ)।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯ ‘সালাত অধ্যায়-৪, ‘তাশাহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫

৪.৯.২. দরূদ :​

সম্পাদনা

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে । নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯১৯

৪.৯.৩. দো’আয়ে মাছূরাহ :​

সম্পাদনা

মাছুরা অর্থ হাদিসে বর্ণিত। সেই হিসাবে হাদীসে বর্ণিত সকল দো’আই মাসুরা। কেবলমাত্র একটি দোয়া নয়। তবে নিম্নের দোয়াটিই এদেশে ‘দো’আয়ে মাছূরাহ’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাক্সী যুলমান কাছীরাও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপর অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৪২ ‘তাশাহহুদে দো’আ অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৮৩৪ আযান অধ্যায়-২, সালামের পূর্বে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৪৯।

তাশাহুদের শেষে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে –

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কাবরি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহি দাজ্জা-লি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যু কালীন ফিতনা হতে।

মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪০-৪১

তাশাহুদ ও সালামের মধ্যেকার দো’আ সমূহের শেষে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিম্নের দো’আ পড়তেন :​

সম্পাদনা

(১) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখশারতু, ওয়ামা আসরারতু অমা আ লানতু, ওয়ামা আসরাফতু, ওয়া মা আংতা আলামু বিহী মিন্নি; আংতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুয়াখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গুনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চাইতে বেশী জানাে। তুমি অগ্র পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।

মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।

(২) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’ঊযু বিকা মিনান্না-র’

(হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।

আবু দাউদ হা/৭৯৩, ‘সালাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৮৬৫

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দো’আ বিষয়ে জ্ঞাতব্য: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দো’আ পড়তেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১; নববী, রিয়াদুস সালেহীন ‘জিকির’ অধ্যায় হা/১৪২৪।

ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত তাশাহহুদে (অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু)এর শেষে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অতঃপর দো’আ সমূহের মধ্যে যে দো’আ সে পসন্দ করে, তা করবে।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯; মিরআত হা/৯১৫, ৩/২৩৫।

এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বান গণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দুআ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন হাদীসে বর্ণিত দো’আ সমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমাদের এই সালাতে মানুষের সাধারণ কথাবার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন পাঠ মাত্র।

বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো’আ করা যাবে। তবে সালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দুআ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো’আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো’আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু…) শেষে নিম্নের দোআটির ন্যায় যে কোন একটা সারগর্ভ দোয়া পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনকে শামিল করে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অধিকাংশ সময় পড়তেন।

আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আযা-বান্না-র। অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।

হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও।

বুখারী হাদিস নং ৪৫২২

এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয় গুলো নিয়তের মধ্যে শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শুনেন। দোয়ার সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।

৪.১০. সালাম​

সম্পাদনা

দো’আয়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকাতুহু’ (এবং তার বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। এভাবে সালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহ সবার বড়) ও তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলে নিম্নের দুআ সমূহ এবং অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে। এ সময় ইমাম হলে ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। অতঃপর সকলে নিম্নের দো’আ সহ অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অনুবাদ : হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।

তথ্যসূত্র: আসরের নামাজের নিয়ম

রাকাআত সংখ্যা

সম্পাদনা

আসরের নামাজ চার রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ নিয়ে গঠিত[]। ফরজ অংশ ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করা হয়। তবে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারেন। নামাজ ৫ ওয়াক্ত পড়তে হবে।

জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল:-

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।

দোয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা