আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়
আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় (১৪ মার্চ, ১৯৩৪ - ২৪ জুলাই, ২০০৯) চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে এবং তৎপরবর্তীকালের একজন সফল বাঙালি গায়িকা ছিলেন[১]। তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে "তারাদের চুমকি জ্বলে আকাশে" "হাট্টি মাটিম টিম", "মন বলছে আজ সন্ধ্যায়", "ছোট্টো পাখি চন্দনা", "আমি আলপনা এঁকে যাই আলোয় ছায়ায়" , "আকাশ আর এই মাটি ওই দূরে" এবং "যদি অলি না চাহে "।
আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্ম | ১৪ মার্চ ১৯৩৪ |
উদ্ভব | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু | ২৪ জুলাই ২০০৯ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৭৫)
ধরন | ভারতীয় ধ্রুপদী ও আধুনিক সংগীত |
পেশা | নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, হারমোনিয়াম বাদক |
বাদ্যযন্ত্র | হারমোনিয়াম |
কার্যকাল | ১৯৪৮-২০০৯ |
লেবেল | এইচএমভি |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনা১৩ বছর বয়সে, আলপনাকে সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করান তার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবিন চট্টোপাধ্যায় এবং গৌরী প্রসন্ন মজুমদার। তারা দুজন তৎকালীন বাংলা গানের জগতে যথাক্রমে সংগীত রচয়িতা এবং গীতিকার হিসাবে খুব সক্রিয় ছিলেন। তার গানগুলো খুব শীঘ্রই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
কর্মজীবন
সম্পাদনাআলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় শিশুদের গান গেয়েই বেশি জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন। এসব গানে তিনি সাধারণ বাংলা ছড়াকে অমর ধ্রুপদীতে রূপান্তরিত করেছিলেন। ১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশক ধরে অধিকাংশ বাঙালি শিশু আলপনার গাওয়া 'হাট্টি মাটিম টিম' বা 'ছোট্টো পাখি চন্দনা'র মতো ধ্রুপদীগুলোর সাথে বড় হয়েছে।
তার আধুনিক গানগুলো আরও অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আলপনার গাওয়া প্রথমদিককার এবং উল্লেখযোগ্য বাংলা অ-চলচ্চিত্রী গানের একটি ছিল রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে "সমীরণ ফিরে চাও" গানটি। এর পরই ১৯৫১ সালে, তিনি আবারো রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে বাংলা চলচ্চিত্র 'বিদ্যাসাগর' এর জন্য "মাটির ঘরে আজ নেমেছে চাঁদ রে" গানটি রেকর্ড করেছিলেন। এই গানটি উল্লেখযোগ্যরকম জনপ্রিয় হয়েছিল। রবিন চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গান ছিল ১৯৫৬ সালে নির্মিত 'সাগরিকা' চলচ্চিত্রের "হৃদয় আমার সুন্দর তব পায়"[২]। তিনি ১৯৫০ এর দশকে নচিকেতা ঘোষ, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শৈলেন মুখোপাধ্যায় এবং ভূপেন হাজারিকা সহ বিভিন্ন সংগীত সুরকারের অধীনে বহু উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র এবং অ-চলচ্চিত্রের গান গেয়েছিলেন। রোমান্টিক "মন বলছে আজ সন্ধ্যায়" থেকে 'বকুলগন্ধে যদি', 'অমি আলপনা এঁকে যাই' এবং 'যেথা আছে ওগো শুধু নীরবতা' প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গানে তার কণ্ঠ স্পষ্ট ছিল।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৫৯ সালে আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীধর মুখোপাধ্যায়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বসবাস করতেন। তার দুটি সন্তান এবং দুটি নাতি-নাতনী রয়েছে। তার মেয়ে লন্ডনের চেলসিতে এবং ছেলে ভারতের মুম্বইয়ে থাকে। বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু।
মৃত্যু
সম্পাদনাআলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৫ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ২৪শে জুলাইয়ে মারা যান। তার সমসাময়িক, ৫০ বছর ধরে পরিচিত সংগীতশিল্পীরা (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়সহ) তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনকারীদের মধ্যে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও ছিলেন। বেশ কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিক গানের দৃশ্যে সক্রিয়ভাবে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তার মৃত্যুর সংবাদটি ভারতীয় গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছিল।
প্লেব্যাক গান
সম্পাদনাআলপনা বন্দ্যোপাধ্যায় নিম্নোল্লিখিত বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে ছিলেন:
- বিদ্যাসাগর
- সহোদর
- বিধিলিপি
- ভাঙ্গাগড়া
- কড়ি ও কমল
- নৌকা বিলাস
- শুভদা (উপরের ছবি থেকে ১৯৫২ সালে তিনি সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলেন)
- সতীর দেহত্যাগ
- সতীর পাতালপ্রবেশ
- মথুর
- সাত নম্বার কয়েদী
- অগ্নিপরীক্ষা
- দ্রৌপদী
- দেড়শো খোকার কাণ্ড
- কার পাপে
- ভীষ্ম
- নাগিনী কন্যার কাহিনী ( পণ্ডিত রবি শঙ্কর পরিচালিত সংগীত)
- হ্যাঁ
- বৌদির বোন
- শিল্পী
- লক্ষ্যভ্রষ্টা
- ব্যক্তিগত সহকারী
- নষ্টনীড়
- মনময়ী গার্লস স্কুল
- অসমাপ্ত
- দস্যু মোহন
- মা ও ছেলে
- লক্ষীহীরা
- রক্তসন্ধ্যা
- বিক্রম উর্বশী
- ছেলে কার
- না
- পথে হল দেরি
- ওরা থাকে ওধারে
- সাগরিকা
- কীর্তিগড়
- ছবি
- বৃন্দাবন লীলা
- সাহেব বিবি গোলাম
- সন্ধ্যারাগ
- একতারা
- শ্রীবৎস চিন্তা
- অদৃশ্য মানুষ
- প্রশ্ন
- পৃথিবী আমারে চায়
তিনি আরও অনেক ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন; উপরের ছবিগুলোতে তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গান রয়েছে।
রেকর্ড করা গান
সম্পাদনাএইচএমভি সারেগামার সাথে রেকর্ড করা তার কয়েকটি গান:
- মন বলেছে আজ সন্ধ্যায়
- অমি আলপনা এঁকে যাই
- বকুলগন্ধে যদি বাতাস
- তারাদের চুমকি জ্বলে আকাশে
- যদি তোমার জীবনে
- এত মঞ্জরি কেন আজ ফুটেছে
- আবছা মেঘের ওম গায়ে
- ওগো তোমায়ে চাওয়া
- পাপিয়া কেনো আর পিয়া ডাকো
- শিয়রের দীপ যদি
- যেথা আছে শুধু নীরবতা
- আকাশ আর এই মাটি ওই দূরে যেথায় মেশে
- ও গুনের নাইয়ারে
- আমার শ্যাম শুক পাখি গো
- আমি সুন্দর বলে
- তোমার মনের রঙ লেগেছে
- ছোট্ট পখি চন্দনা
- ফিরে ফিরে চায় কে যে
- বলেছিলে তুমি গান শোনাবে
- সমীরণ ফিরে চাও
- মাটির ঘরে আজ নেমেছে চাঁদ রে
- হৃদয় আমার সুন্দর তব পায়[২]
শিশুতোষ ছড়া
সম্পাদনাএইচএমভি সারেগামায় রেকর্ড করা তার কয়েকটি নার্সারি ছড়া।
- হাট্টি মাটিম টিম
- ময়নার মা ময়নামতি
- দোল দোল দুলুনি
- আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম
- যমুনাবতি সরস্বতী
- সজলপুরে কাজল মেয়ে
- খুকু যাবে শ্বশুর বাড়ি
- ছোট্ট পাখি চন্দনা
- বিদেশিনী কাদের রাণি
- চন্দ্রকলা বরনমালা
- নাচে নাচে পুতুল নাচে
- ওঠো ওঠো সুর্যাই
- চরকা কাটে বুড়ি
- পৌষালি সন্ধ্যা ঘুম ঘুম তন্দ্রা
- কানা মাছি ভোঁ ভোঁ
- হই হুল্লোড় শোরগোল
- চটপট উঠে পড়ো
- আয় রে আয় ছেলের পাল
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Alpana Banerjee"। Discogs (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৯।
- ↑ ক খ "BengalInfo - বাংলা গান"। bengalinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৯।