টাইটানিক

একটি ব্রিটিশ জাহাজ যেটা ১৯১২ সালে ডুবে গেছিল।
(আরএমএস টাইটানিক থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আরএমএস টাইটানিক একটি ব্রিটিশ যাত্রীবাহী বৃহদাকার সামুদ্রিক জাহাজ ছিল যা ১৫ এপ্রিল, ১৯১২ সালে জাহাজটির প্রথম সমুদ্রযাত্রায় সাউথহ্যাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটি যাওয়ার পথে হিমশৈলের (আইসবার্গের) সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তর অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়। এটি ঐ সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ আধুনিক ও বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল

আরএমএস টাইটানিক ১০ এপ্রিল ১৯১২ এ সাউথ্যাম্পটন ছেড়ে যাচ্ছে
মানচিত্র
টাইটানিক এর অবস্থান ধ্বংশ
ইতিহাস
ইউনাইটেড কিংডম
নাম: আরএমএস টাইটানিক
নামকরণ: টাইটানস
স্বত্তাধিকারী: হোয়াইট স্টার লাইন
পরিচালক: হোয়াইট স্টার লাইন
নিবন্ধনকৃত বন্দর: গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য লিভারপুল, ইংল্যান্ড
চলাচলের রাস্তা: সাউথ্যাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটি
নির্মাণাদেশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৮
নির্মাতা: Harland and Wolff, বেলফাস্ট
মোট খরচ: £1.5 million (£{{মুদ্রাস্ফীতি}} ব্যবহার করার সময় ত্রুটি: |index=UK-GDP (প্যারামিটার ১) একটি স্বীকৃত সূচক নয়। million in 2019)
ইয়ার্ড নম্বর: 401
পথ নম্বর: 400
নির্মাণের সময়: 31 March 1909
অভিষেক: 31 May 1911
সম্পন্ন: 2 April 1912
অভিষেক যাত্রা: 10 April 1912
কার্যসময়: 10 April 1912
অকার্যকর: 15 April 1912
শনাক্তকরণ:
নিয়তি: Struck an iceberg at 11:40 pm (ship's time) 14 April 1912 on her maiden voyage and sank 2 h 40 min later on ১৫ এপ্রিল ১৯১২; ১১২ বছর আগে (1912-04-15)
অবস্থা: Wreck
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার ও শ্রেণী: Olympic-শ্রেণির ocean liner
টনিজ: টেমপ্লেট:GRT, টেমপ্লেট:NRT
ওজন: 52,310 tonnes
দৈর্ঘ্য: ৮৮২ ফুট ৯ ইঞ্চি (২৬৯.১ মিটার) overall
প্রস্থ: ৯২ ফুট ৬ ইঞ্চি (২৮.২ মিটার)
উচ্চতা: ১৭৫ ফুট (৫৩.৩ মিটার) (keel to top of funnels)
গভীরতা: ৩৪ ফুট ৭ ইঞ্চি (১০.৫ মিটার)
গভীরতা: ৬৪ ফুট ৬ ইঞ্চি (১৯.৭ মিটার)
পাটাতন: 9 (A–G)
ইনস্টল ক্ষমতা: 24 double-ended and five single-ended boilers feeding two reciprocating steam engines for the wing propellers, and a low-pressure turbine for the centre propeller;[] output: 46,000 HP
প্রচালনশক্তি: Two three-blade wing propellers and one centre propeller
গতিবেগ:
  • Service: ২১ নট (৩৯ কিমি/ঘ; ২৪ মা/ঘ)
  • Max: ২৩ নট (৪৩ কিমি/ঘ; ২৬ মা/ঘ)
ধারণক্ষমতা: 2,453 passengers and 874 crew (3,327 in total)
টীকা: Lifeboats: 20 (sufficient for 1,178 people)

নামকরণ

সম্পাদনা

প্রাচীনকালে ‘টাইটানরা’ ছিলেন গ্রিক পুরানের শক্তিশালী দেবতা। তাঁরা তাঁদের বৃহদাকার শরীরের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। জাহাজের বৃহদাকৃতির কারণে তাঁদের নামানুসারে এই জাহাজের নাম রাখা হয়েছিল ‘টাইটানিক’। এটি আসলে জাহাজটির সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো নাম ছিল ‘আর এম এস টাইটানিক’। ‘আর এম এস’ এর অর্থ হচ্ছে ‘রয়্যাল মেল স্টিমার’। অর্থাৎ পুরো জাহাজটির নাম ছিল ‘রয়্যাল মেল স্টিমার টাইটানিক’।

নির্মাণকালীন তথ্য

সম্পাদনা

টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয় ১৯০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কাজ করে ১৯১২ সালে জাহাজটির কাজ শেষ হয়। ইংল্যান্ডের ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ এই জাহাজটি নির্মাণ করে। ৬০ হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জাহাজটি নির্মাণ করতে সে সময় খরচ হয়েছিল ৭৫ লাখ ডলার।

যাত্রা শুরু

সম্পাদনা

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। সে সময় টাইটানিকে মোট যাত্রী ছিল ২২০০ জন এবং কয়েকশ কর্মী। শুরুতেই মাত্র চার ফুটের জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’ জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ হয়। ৭৭ নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ থেকে ২৭৪ জন যাত্রী তুলে নেয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে জাহাজে ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং সাতজন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী।[] বৃটেন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক ছিল। ছোটোখাটো জাহাজের পক্ষে বলা চলে জীবন বাজি রেখে যাত্রা করা। কারণ হঠাৎ সামুদ্রিক ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে পড়ার আশঙ্কা সবসময়ই ছিল। তারপরও এত সংখ্যক যাত্রী সমুদ্রের রোমাঞ্চকর এই ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য টাইটানিকের যাত্রী হয়েছিল। টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩১০০ ডলার। আর তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া ছিল ৩২ ডলার।

দুর্ঘটনার দিন দুপুরের ঘটনা

সম্পাদনা

১৪ই এপ্রিল দুপুর ২ টার দিকে ‘America’ নামের একটি জাহাজ থেকে রেডিওর মাধ্যমে টাইটানিক জাহাজকে জানায় তাদের যাত্রাপথে বড় একটি আইসবার্গ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ‘Mesaba’ নামের আরও একটি জাহাজ থেকে এই একই ধরনের সতর্কবার্তা পাঠানো হয় টাইটানিকে। এ সময় টাইটানিকের রেডিও যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন জ্যাক পিলিপস ও হ্যারল্ড ব্রীজ। দু’বারই তাদের দুজনের কাছে এই সতর্কবার্তাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। তাই তারা এই সতর্কবার্তা টাইটানিকের মূল নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠাননি। টাইটানিক দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট আগে ‘SS Californian’ শিপের রেডিও অপারেটর টাইটানিকের সাথে যোগাযোগ করে আইসবার্গটি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিল, কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটর ক্লান্ত জ্যাক পিলিপস্ রাগান্বিত ভাবে বলে "আমি কেইপ রেসের সাথে কাজে ব্যাস্ত এবং লাইন কেটে দেয়।" ফলে Californian শিপের রেডিও অপারেটর তার ওয়ার্লেস বন্ধ করে ঘুমাতে চলে যায়। বলা চলে তাদের এই হেয়ালীপনার কারণেই ডুবেছে টাইটানিক।

দুর্ঘটনায় পড়া

সম্পাদনা

টাইটানিক যখন দুর্ঘটনা স্থলের প্রায় কাছাকাছি চলে আসে, তখনই জাহাজের ক্যাপ্টেন সামনে আইসবার্গের সংকেত পান। আইসবার্গ হল সাগরের বুকে ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সব বরফখণ্ড। এগুলোর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এগুলোর মাত্র আট ভাগের এক ভাগ জলের উপরে থাকে। মানে, এর বড়ো অংশটাই দেখা যায় না। তখন তিনি জাহাজের অভিমুআ সামান্য দক্ষিণ দিকে ঘুরিয়ে নেন। সে সময় টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষণকারীরা সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই আইসবার্গটি দেখতে পায় কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দেন এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এর ডানদিক আইসবার্গের সাথে প্রচন্ড ঘষা খেয়ে চলতে থাকে। ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিঁড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি যেই স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম হলো ‘গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ড’। টাইটানিক সর্বোচ্চ ৪টি জলপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে থাকতে পারতো। কিন্তু জলপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ৬টি কম্পার্টমেন্ট। এছাড়া জল প্রতিরোধ এর জন্য ১২টি গেট ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এমন জায়গায় জাহাজটির ধাক্কা লাগে যে, সবগুলো গেটের জল প্রতিরোধ বিকল হয়ে যায়। জলের ভারে আস্তে আস্তে সমুদ্রে তলিয়ে যেতে থাকে টাইটানিক।

সম্পূর্ণ অংশ তলিয়ে যাওয়া

সম্পাদনা

রাত ২ টা থেকে ২ টা ২০ মিনিটের মধ্যে টাইটানিকের সম্পূর্ণ অংশ আটলান্টিকের বুকে তলিয়ে যায়। ডুবে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে জাহাজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিকল হয়ে যায়। আরো জানুন: আরএমএস টাইটানিকের নিমজ্জন

বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার

সম্পাদনা

টাইটানিক যখন সমুদ্রের বুকে তলিয়ে যায় ঠিক তার এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর রাত ৪ টা ১০ মিনিটে সেখানে আসে ‘আরএমএস কারপাথিয়া’ নামের একটি জাহাজ। জাহাজটি সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়ানো ৭০০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নিউইয়র্কে চলে যায়।

ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া

সম্পাদনা

দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী। রবার্ট বালার্ড নামক ফরাসি বিজ্ঞানী টাইটানিককে খুঁজে বের করেন। ১৯৮৫ সালে এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। “আনসিংকেবল” টাইটানিক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৬০০ ফুট নিচে আটলান্টিকের তলদেশে স্থির হয়ে আছে। দ্বিখণ্ডিত জাহাজটির দুটো টুকরো ১৯৭০ ফুট দূরে অবস্থান করছে। টাইটানিকের সম্মুখভাগ সমুদ্রতলে ৬০ ফুট মাটির গভীরে প্রোথিত। ১৪ জুলাই ১৯৮৬, ঘটনার ৭৪ বছর পর টাইটানিক পুনরাবিষ্কৃত হয়।[]সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ এর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু ২০ জুন ২০২৩ ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে যাওয়া 'টাইটান' সাবমেরিন ও উধাও হয়ে যায় এবং ৫ জন যাত্রী নিহত হন। টাইটানিকের জাহাজের পাশেই 'টাইটান' সাবমেরিনের ও সলিল সমাধি।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Titanic History, Facts and Stories"Titanic Museum Belfast। ৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  2. "Titanic Centenary"Newcastle University Library। ৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  3. Beveridge ও Hall 2004, পৃ. 1।
  4. "টাইটানিক ট্র্যাজেডির শতবর্ষ"। ২০১৬-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪-০৯-২০১৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. "টাইটানিক ট্র্যাজেডির শতবর্ষ"। ২০১৬-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪-০৯-২০১৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. "টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ৫ জন আর বেঁচে নেই: মার্কিন কোস্টগার্ড"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৩