আব্দুল জব্বার খান (চলচ্চিত্র পরিচালক)
আব্দুল জব্বার খান (১৯১৬ - ২৮শে ডিসেম্বর ১৯৯৩) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার ও পূর্ব বাংলার বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হিসেবে সমাদৃত। তার চিত্রনাট্য, অভিনয় এবং পরিচালনায় "মুখ ও মুখোশ" চলচ্চিত্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত।
জন্ম ও শৈশব
সম্পাদনাআব্দুল জব্বার খান বাংলা ১৩২২ সালের ৭ই বৈশাখ (১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ) তারিখে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার উত্তর মসদ গাঁও নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী মোহাম্মদ জমশের খান। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
আসামের ধুবড়ী এলাকায় তার বাবা পাটের ব্যবসা করতেন। সেখানেই শৈশবে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। পাঠ্য অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন নাটকের সঙ্গে। তিনি অভিনয় করেন "বেহুলা", "সোহরাব রোস্তম" নাটকে। প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত "সিন্ধু বিজয়" নাটকেও তিনি অভিনয় করেন। নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেন।[১]
পরবর্তী জীবন
সম্পাদনাপ্রমথেশ বড়ুয়ার সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি কলকাতায় গিয়ে তার বাসায় থেকে নাটক দেখতেন। প্রমথেশ বড়ুয়ার "মুক্তি" চলচ্চিত্রে আব্দুল জব্বার খানের অভিনয়ের কথা থাকলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে পরে তিনি তা করতে পারেননি। পরে তিনি প্রমথেশ বড়ুয়ার "শাপ মুক্তি" চলচ্চিত্রের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু পিতার কাছ থেকে অণুমতি না পাওয়াতে তিনি সে চলচ্চিত্রটিও করতে পারেননি। তবে তিনি নিয়মিত মঞ্চনাটক করেছেন। তিনি "সমাজপতি ও মাটির ঘর" নাটকে অভিনয় করে স্বর্ণপদক পান। গৌহাটিতে পরিচালনা করেন "টিপু সুলতান"। ১৯৪১ সালে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন। ঢাকায় এসে সংগঠিত করেন 'কমলাপুর ড্রামাটিক এসোসিয়েশন'। এ সংগঠনের উদ্যোগে তিনি "টিপু সুলতান" ও "আলীবর্দী খান" নাটক মঞ্চায়ন করেন। পরে তিনি "ঈসাখাঁ" (১৯৫০), "প্রতিজ্ঞা" (১৯৫১), "ডাকাত" (১৯৫৩),"জগোদেশ" (১৯৫৯) রচনা করেন।
১৯৫৬ সালে তার রচিত নাটক "ডাকাত" (পরবর্তীতে উপন্যাস হিসেবে প্রকাশিত) অবলম্বনে তৈরি করেন "মুখ ও মুখোশ" নামক চলচ্চিত্র। "মুখ ও মুখোশ"-ই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ( বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে তৈরি প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনার সাথে সাথে এর মূল চরিত্রেও অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রে তার ছেলেবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন তার ছেলে মাস্টার জুলু। এরপর তিনি পরিচালনা করেন "জোয়ার এলো" (১৯৬২), উর্দূতে "নাচ ঘর" (১৯৬৩), "বনসারি" (১৯৬৮), "কাচঁ কাটা হীরা" (১৯৭০), "খেলারাম" (১৯৭৩) চলচ্চিত্র।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার খান মজিব নগর সরকারের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড, অণুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড, ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ষাট দশকের প্রথম ভাগে গঠিত পাকিস্তান পরিচালক সমিতির অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
স্বীকৃতি
সম্পাদনামুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্র মুক্তির পর তিনি তেমন কোন স্বীকৃতি পাননি। কেবলমাত্র এফডিসিতে তার নামে একটি পাঠাগার রয়েছে। পরিচালক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করায় ঢাকার সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা থেকে এফডিসি ছাড়িয়ে টঙ্গী ডাইভারশন রোড পর্যন্ত সড়কটি 'আবদুল জব্বার খান সড়ক' নামে পরিচিত হবে।[২] অবশেষে ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক ভূষিত করে।
মৃত্যু
সম্পাদনাআব্দুল জব্বার খান ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর ২৮ তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় মৃতুবরণ করেন।
আরও পড়ুন
সম্পাদনাতথসূত্র
সম্পাদনা- ↑ গোলাম কাদের, "বিক্রমপুর মনীষা", ২য় সংস্করণ, মার্চ ২০০৫, অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২, আইএসবিএন ৯৮৪৪-৫৭২-০০০ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম-5।
- ↑ দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২২ অক্টোবর, ২০১১, পৃষ্ঠা ২০, মুদ্রিত, রংবেরং
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে আব্দুল জব্বার খান (ইংরেজি)