আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ
আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ (১৮৮০ - ২৩ নভেম্বর ১৯৪০) একজন ভারতীয় ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ওলামা ছিলেন।[১] তিনি আঞ্জুমান-উলামা-ই-বিহার, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, এবং ইমারত শরিয়াহ’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।[২] ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নেতা হিসেবে আবুল মুহসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ অসহযোগ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন এবং নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে অংশ নেন; তিনি ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেছিলেন এবং সম্মিলিত জাতীয়তাবাদের ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বিহারের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ১৯৩৫ সালে মুসলিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি বিহারে ১৯৩৭ সালে সরকার গঠন করে, দলের সভাপতি ইউনূস ১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন।[৩][৪]
আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ | |
---|---|
১ম সচিব, জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ | |
উপাধি | মাওলানা |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৮৮০ পানহেসা, বিহার প্রদেশ, ঔপনিবেশিক ভারত |
মৃত্যু | ২৩ নভেম্বর ১৯৪০ | (বয়স ৫৯–৬০)
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
আখ্যা | সুন্নি ইসলাম |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
যেখানের শিক্ষার্থী | মাদ্রাসা সুভানিয়া, এলাহাবাদ |
এর প্রতিষ্ঠাতা | মুসলিম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাতিনি ভারতের বিহার প্রদেশের নালন্দা জেলার পানাহেসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] ৪ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতা হুসেন বকশকে হারান।
সাজ্জাদের বড় ভাই ছিলেন সূফী সাধক সুফি আহমদ সাজ্জাদ, যিনি ১৯৪৮ সালে মারা যান। সুফি আহমদ সাজ্জাদের মাজারটি তার গ্রামের একটি মসজিদের নিকটে অবস্থিত, যেখানে প্রতি বছরের ২৭শে মহরম উরস পালিত হয়। তার নাতি পীর সৈয়দ শাহ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (জন্ম ১৯৫৩) বর্তমানে মাজারের দায়িত্বে আছেন।[২]
আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ বিহারের মাদ্রাসা ইসলামিয়াতে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে প্রায় ছয় বছর এলাহাবাদের মাদ্রাসা সুবহানিয়ায় পড়াশোনা শুরু করেন। তার প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল কাফি। তিনি ১৩২৩ হিজরিতে স্নাতক লাভ করেন।[৫] সাজ্জাদ বিহার শরীফ, দেওবন্দ এবং এলাহাবাদ থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।[২]
আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদের তিন কন্যা ও তিন পুত্র ছিল। কন্যারা হলেন সাইদা খাতুন, তাহরা খাতুন, নাসিমা খাতুন। তিন পুত্রের মধ্যে দুই পুত্র আহসান সাজ্জাদ, হাসান সাজ্জাদ অল্প বয়সে মারা যায় এবং এক পুত্র মনজুর সাজ্জাদ সাত বছরে মারা যায়।
কর্মজীবন
সম্পাদনাপড়াশুনা শেষ করে, আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ ধর্মতত্ত্ব পড়ানোর জন্য বিহার শরীফ এবং এলাহাবাদে ফিরে আসেন। পরে তিনি গয়াতেও শিক্ষাদান করেছিলেন।[২]
১৯১৭ সালে সাজ্জাদ আঞ্জুমান-উলামা-ই-বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জামায়াত আল-উলামা-ই-হিন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং এর সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২]
এছাড়া তিনি ইমরাত-ই-শরিয়া প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিলেন ও সেখানে সচিবের দায়িত্বও পালন করেন।[২]
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন নেতা হিসেবে মাওলানা মোহাম্মদ সাজ্জাদ অসহযোগ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন ও নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।[২] তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রবক্তা ছিলেন এবং সাইমন কমিশন বর্জনে হরতাল পালনে নেতৃত্ব দেয়াদের একজন ছিলেন। তিনি ভারত বিভাগ এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচারের বিরোধিতা করেছিলেন।[৩]
মাওলানা মুহাম্মদ সাজ্জাদ গায়ায় আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৪০ সালের ২৩ নভেম্বর, আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- নদভী, তালহা নেমত (২০১৮)। হযরত মাওলানা আবুল মুহাসিন মুহাম্মাদ সাজ্জাদ (উর্দু ভাষায়) (২য়, ২০১৯ সংস্করণ)। আবজাদ পাবলিশার্স।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মোহাম্মদ, মুজাফফর ইমাম (১৯৮৭)। Role of Muslims in the National Movement, 1912-1930: A Study of Bihar (ইংরেজি ভাষায়)। মিত্তাল পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২৫০। আইএসবিএন 978-81-7099-033-8।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ আলম, জাওয়াইদ (১ জানুয়ারি ২০০৪)। Government and Politics in Colonial Bihar, 1921-1937 [ঔপনিবেশিক বিহারে সরকার ও রাজনীতি, ১৯২১-১৯৩৭] (ইংরেজি ভাষায়)। মিত্তাল পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২২৫। আইএসবিএন 978-81-7099-979-9।
- ↑ ক খ সাজিদ, মোহাম্মদ (২৪ মে ২০১৮)। "The real culprits behind India's Partition" (ইংরেজি ভাষায়)। রেডিফ। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ আশরাফ, আজাজ (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "The forgotten story of two Maulanas who mocked Jinnah's idea of Pakistan" (ইংরেজি ভাষায়)। Scroll.in। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ ক খ গ আসির আদ্রাভি। তাজকিরাহ মাশাহির-ই-হিন্দ: কারওয়ান-ই-রাফতা (উর্দু ভাষায়) (২য়, ২০১৬ সংস্করণ)। দারুল মুয়ালিফিন। পৃষ্ঠা ১৩।