আবুল মনসুর আহমেদ
আবুল মনসুর আহমদ (বাংলা উচ্চারণ: [abul mɔnsuɾ aɦmɔd̪]; ৩রা সেপ্টেম্বর ১৮৯৮-১৮ই মার্চ ১৯৭৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিক।[১][২] তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)' ও আত্মকথা (১৯৭৩) তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা।
আবুল মনসুর আহমদ | |
---|---|
জন্ম | ৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ |
মৃত্যু | ১৮ই মার্চ, ১৯৭৯ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় (৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮-১৪ আগস্ট ১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৪ আগস্ট ১৯৪৭-১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশী (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-১৮ মার্চ ১৯৭৯) |
পেশা | সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক |
পরিচিতির কারণ | সাহিত্য, সাংবাদিকতা, রাজনীতি |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | আকিকুন্নেসা জিনত (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬-) |
সন্তান | মনসুর আনাম মহবুব আনাম মতলুব আনাম মনজুর আনাম মাহফুজ আনাম |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯) |
জন্ম
সম্পাদনাতিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে ১৮৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী, মাতার নাম মীর জাহান খাতুন।
ছাত্রজীবন
সম্পাদনাতিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক পাস করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বিশিষ্ট আইনজীবীও ছিলেন।[২] গোঁড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কি টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজ ও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের সাহচর্যে আবুল মনসুর প্রথম উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ১৯১৮-১৯ সাল থেকে তিনি কবর পূজা এবং পীর পূজাসহ হিন্দু-মুসলিম সমাজের সকল কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেন (আত্মকথা, পৃ ১৮০-৮১)।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআইনজীবী ও সাংবাদিক হিসেবে
সম্পাদনাতিনি সাংবাদিক হিসেবে নানান সংবাদপত্রে কাজ করেছেন, যেমন:ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি।
আবুল মনসুর আহমদ চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে অবিরাম প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
রাজনীতিবিদ হিসেবে
সম্পাদনাআবুল মনসুর আহমেদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তানের আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ববাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন।
১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৪]
সাহিত্যিক হিসেবে
সম্পাদনাআবুল মনসুর আহমেদ একজন শক্তিমান লেখক ছিলেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আয়না ও ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থদ্বয়ে তিনি মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভণ্ডামিসহ নানা কুসংস্কারের ব্যঙ্গ করেছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।[২]
গ্রন্থসমূহ
সম্পাদনাব্যঙ্গরচনা
সম্পাদনাস্মৃতিকথা
সম্পাদনা- আত্মকথা (১৯৭৩, আত্মজীবনী)
- আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)
- শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২)
অন্যান্য রচনা
সম্পাদনা- সত্য মিথ্যা (১৯৫৩)
- জীবনক্ষুধা (১৯৫৫)
- আবে হায়াত (১৯৬৮)
- হুযুর কেবলা (১৯৩৫)
- বাংলাদেশের কালচার (১৯৬৬)
- আসমানী পর্দা (১৯৬৪)
- বাংলা একাডেমি সম্প্রতি আবুল মনসুর আহমদ রচনাসমগ্র নিয়ে তিন খণ্ড প্রকাশনা করেছে। আরও তিন খণ্ড প্রকাশিতব্য রয়েছে ( জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সম্পাদনায় ও কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজের সহযোগিতায়)।
পুরস্কার ও সম্মননা
সম্পাদনাসাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের "সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার"[৬][৭][৮] হিসাবে পরিচিত "স্বাধীনতা পুরস্কার" প্রদান করা হয় তাকে।[৯] এছাড়াও তিনি "বাংলা একাডেমী পুরস্কার" (১৯৬০) ও নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাআবুল মনসুর আহমেদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাকে নিয়ে লেখা গ্রন্থ
সম্পাদনা- আবুল মনসুর আহমদ জীবনী (বাংলা একাডেমী), ডঃ নুরুল আমিন
- আবুল মনসুর আহমদের চিন্তাধারা (বাংলা একাডেমী) ডঃ মিজানুর রহমান
- আবুল মনসুর আহমদ স্মারকগ্রন্থ (প্রথমা ২০১৫) ইমরান মাহফুজ
- জীবনশিল্পি আবুল মনসুর আহমদ ( স্মৃতি পরিষদ ২০১৬) ইমরান মাহফুজ
- আবুল মনসুর আহমদ সংখ্যা (২০০৯) সম্পাদক ইফফাত আরা
- দুর্লভ কথক কালের ধ্বনি’র আবুল মনসুর আহমদ সংখ্যা (২০১৫) প্রধান সম্পাদক আশিক রেজা ও সম্পাদক ইমরান মাহফুজ[১০]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "আবুল মনসুর আহমেদ : যে কারণে আলোচিত"। জননেতা.কম। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ ক খ গ "আবুল মনসুর আহমেদ"। প্রিয়.কম। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ইমরান, মাহফুজ (২০১৮-০৯-০৩)। "আবুল মনসুর আহমদের আয়না ও তার প্রাসঙ্গিকতা"। www.thedailystar.net। ২০২০-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-০৯।
- ↑ "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৫৯।
- ↑ সানজিদা খান (২০১২)। "জাতীয় পুরস্কার"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"। কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। ২৪ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"। এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "'কালের ধ্বনি'র আবুল মনসুর আহমদ সংখ্যা | ইত্তেফাক সাময়িকী | The Daily Ittefaq"। archive1.ittefaq.com.bd। ২০২০-০৪-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৫।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |