আবদুল আউয়াল সরকার
আবদুল আউয়াল সরকার (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]
আবদুল আউয়াল সরকার | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৯৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআবদুল আউয়াল সরকারের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর (সাবেক সদর) উপজেলার শাদগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম আফতাব উদ্দিন সরকার এবং মা কেলেস্তারা বিবি। তার স্ত্রীর নাম হালিমা খাতুন সিদ্দিক। তাদের ছয় মেয়ে, দুই ছেলে।
কর্মজীবন
সম্পাদনাআবদুল আউয়াল সরকার পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন এবং ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের করাচিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌদলে অন্তর্ভুক্ত হন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত থেকে অবসর নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর সকালে খুলনার জলসীমায় নির্বিঘ্নেই পৌঁছে মুক্তিবাহিনীর দুটি এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি গানবোট আসে। মুক্তিবাহিনীর একটি গানবোটে ছিলেন আবদুল আউয়াল সরকার। হঠাৎ আকাশে দেখা যায় তিনটি জঙ্গি বিমান। বিমানগুলো ঘুরে এসে বোমাবর্ষণ করে মুক্তিবাহিনীর গানবোটে। এতে ঘটে আকস্মিক ঘটে বিপর্যয়। এর আগে ৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর দুটি গানবোট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ ভারত থেকে নৌপথে বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। পলাশ গানবোটে ছিলেন আবদুল আউয়াল সরকার। অভিযান শুরু হয় হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে এবং পথে মিত্রবাহিনীর দুটি রণতরিও পদ্মা-পলাশের সঙ্গে যোগ দেয়। একটির নাম আইএনএস ‘প্যানভেল’ (গানবোট) এবং অন্যটির নাম ‘চিত্রাঙ্গদা’ (প্যাট্রল ক্রাফ্ট)।
পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রণতরিগুলো বাংলাদেশের আকরাম পয়েন্টে পৌঁছে। সকালে নয়টায় মংলা থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। সামনে থাকে প্যানভেল, মাঝে পলাশ, শেষে ছিল পদ্মা। রণতরিগুলো যখন খুলনার পাকিস্তানি নৌঘাঁটির কাছাকাছি, তখন আকাশে দেখা যায় তিনটি জঙ্গি বিমান। তবে তখন জানা যায় সেগুলো ছিলো ভারতীয় বিমান। তবে কিছুসময় পর বিমানগুলো কিছুটা নিচে নেমে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাগরের দিকে চলে যায়। এরপর হঠাৎ ঘুরে এসে বোমাবর্ষণ করে পদ্মার ওপর। পরক্ষণেই পলাশে। যদিও গানবোটগুলো মুক্তি না মিত্রবাহিনীর তা শনাক্তের জন্য ছাদে ১৫ ফুট লম্বা এবং ১০ ফুট চওড়া হলুদ কাপড় বিছানো ছিল। তার পরও ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ভারতীয় বিমান বাহিনী শত্রু বাহিনীর রণতরী ভেবে আক্রমণ চালায়। বোমার আঘাতে মুক্তিবাহিনীর গানবোটে আগুন ধরে যায়। দুই গানবোটে আবদুল আউয়াল সরকারসহ ৫৬ জন নৌযোদ্ধা ছিলেন। বিপদ আন্দাজ করে কেউ কেউ আগেই পানিতে ঝাঁপ দেন। তারা অক্ষত থাকেন। কিন্তু আউয়ালসহ মুক্তিযোদ্ধাদা দলের অনেকেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গানবোটেই ছিলেন। যাঁরা গানবোটে ছিলেন তাদের কয়েকজন শহীদ এবং বাকি প্রায় সবাই আহত হন।
ঘটনাচক্রে সে আক্রমণে আবদুল আউয়াল সরকার তেমন আহত হননি। তিনি গুরুতর আহত দুই-তিনজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। আহত অন্য নৌমুক্তিযোদ্ধারাও যে যাঁর মতো পানিতে ঝাঁপ দেন। অনেকে সাঁতার কেটে নদীর পাড়ে যান। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল অন্য আরেক বিপদ। কারণ নদীতিরে ছিল পাকিস্তানি সেনা বা তাদের সহযোগী রাজাকার। আবদুল আউয়াল সরকার, রুহুল আমিনসহ (বীর শ্রেষ্ঠ) কয়েকজনকে রাজাকাররা আটক করে। রুহুল আমিনকে রাজাকাররা তখনই হত্যা এবং বাকিদের নির্যাতনের পর পাকিস্তানিদের কাছে হস্তান্তর করে। পাকিস্তানিরা তাকেসহ অন্যদের জেলে পাঠায়। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তি পান।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ৩১-১০-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ৩১-১০-২০১২"। ২০২০-০২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।