আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন

বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞান লেখক
(আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন (১ জানুয়ারি ১৯৩০ - ৩০ নভেম্বর ১৯৯৮) বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ আল-মুতী নামেই সমধিক পরিচিত। বিজ্ঞান জনপ্রিয় করণে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি ইউনেস্কো কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকস্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন
জন্ম(১৯৩০-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯৩০
সিরাজগঞ্জ
মৃত্যু৩০ নভেম্বর ১৯৯৮(1998-11-30) (বয়স ৬৮)
পেশাশিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
ধরনবিজ্ঞান বিষয়ক লেখা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

আবদুল্লাহ আল-মুতী সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা হালিমা শরফুদ্দিন এবং বাবা শেখ মইন শরফুদ্দিন। ৫ ভাই ৬ বোনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মুতী সবার বড়। ১৯৪৫ সালে ঢাকার মুসলিম হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (এখনকার এসএসসি পরীক্ষা) পরীক্ষায় কলকাতা বোর্ডে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ১১ তম স্থান নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে আই এ পাশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পদার্থবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক হন ১৯৫২ সালে। বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়তার কারণে এই সময় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি লাভ করলেও বছর প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে শিক্ষায় এম,এ এবং ১৯৬২ সালে পিএইচডি লাভ করেন।[] তার অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল ‌কারিকুলাম চেঞ্জেস ইন পাকিস্তান উইথ স্পেশাল রেফারেন্সেস টু হাই স্কুল সায়েন্স এডুকেশন (উচ্চ বিদ্যালয় বিজ্ঞান শিক্ষার বিশেষ রেফারেন্সসহ পাকিস্তানে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন)।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

আবদুল্লাহ আল-মুতী কর্ম জীবন শুরু করেন রাজশাহী কলেজে শিক্ষক হিসাবে। ১৯৭৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে যোগ দেন। তারপর শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালে। তার প্রকাশিত বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ২৭, অণুদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০, সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০। এছাড়াও কিছু পান্ডুলিপি রয়েছে, যার অনেক গুলো এখনও অপ্রকাশিত। রেডিও এবং টিভিতে তার উপস্থাপিত অণুষ্ঠান বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিজ্ঞানের জটিল, সূক্ষ বিষয়কে সহজ ভাষায় সর্বজনবোধ্য করে তোলার জন্য তার দক্ষতা ও সাফল্য ছিল তুলনাহীন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য অঙ্গণে অজস্র সংগঠন প্রতিষ্টানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন আমৃত্যু। ১৯৪৭ সালে মুকুল ফৌজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরবর্তী বছরে "মুকুল" নামে কিশোর পাক্ষিক পত্রিকা বের করেন। কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা -এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইত্তেফাক, আজাদ, মোহাম্মদী পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংস্থা সহ নানা সংঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি (১৯৮৮-৯০), বাংলা একাডেমি, ঢাকা (১৯৮৬-৯০) ও বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতিতে। এছাড়া তিনি আরো যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রধান উপদেষ্টা, প্রথম ঢাকা মহাকাশ উৎসব "বেক্সিমকো স্পেসফেস্ট ১৯৯৬', চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দশম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন কমিটি (১৯৯৮), উপদেষ্টা, দ্বিতীয় ঢাকা মহাকাশ উৎসব ‘স্পেসফেস্ট ১৯৯৯’। প্রধান উপদেষ্টা, ঢাকা প্রস্তাবিত স্পেস সেন্টার, উপদেষ্টা, মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান তথ্যকেন্দ্র ও গ্রন্থাগার (১৯৯৭-৯৯)। জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকরণের কর্মকান্ডে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকে উজ্জ্বল অবদান রেখে গেছেন।

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

যৌবনে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ

সম্পাদনা
  • সাগরের রহস্যপুরী
  • এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে
  • রহস্যের শেষ নেই
  • আবিষ্কারের নেশায়

শিশু ও বিজ্ঞান-বিষয়ক

সম্পাদনা
  • এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে (১৯৫৫)
  • অবাক পৃথিবী (১৯৫৫)
  • আবিষ্কারের নেশায় (১৯৬৯)
  • রহস্যের শেষ নেই (১৯৬৯)
  • বিজ্ঞান ও মানুষ (১৯৭৫)
  • জানা-অজানার দেশে (১৯৭৬)
  • সাগরের রহস্যপুরী (১৯৭৬)
  • আয় বৃষ্টি ঝেঁপে (১৯৮০)
  • এ যুগের বিজ্ঞান (১৯৮১)
  • মেঘ বৃষ্টি রোদ (১৯৮১)
  • ফুলের জন্য ভালোবাসা (১৯৮২)
  • সোনার এই দেশ (১৯৮৩)
  • তারার দেশের হাতছানি (১৯৮৪)
  • বিচিত্র বিজ্ঞান (১৯৮৫)
  • বিপন্ন পরিবেশ (১৯৮৫)
  • প্রাণলোক: নতুন দিগণ্ত (১৯৮৬)
  • বিজ্ঞানের বিস্ময় (১৯৮৬)
  • ছবিতে আমাদের পরিবেশ (১ম ভাগ-১৯৮৭, ২য় ভাগ-১৯৯০)
  • টেলিভিশনের কথা (১৯৮৮)
  • বিজ্ঞান-জিজ্ঞাসা (১৯৮৮)
  • কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস (১৯৮৮)
  • কাজী মোতাহার হোসেন (১৯৮৮)
  • বিজ্ঞান এগিয়ে চলে (১৯৯১)
  • চোখ মেলে দেখ (১৯৯২)
  • ফারিয়া-নাদিয়ার মজার সফর (১৯৯৬)
  • পরিবেশের সংকট ঘনিয়ে আসছে (১৯৯৬)
  • আজকের বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ (১৯৯৬)
  • মহাকাশে কী ঘটছে (১৯৯৭)

শিক্ষা-বিষয়ক

সম্পাদনা
  • শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৫)
  • শিক্ষা ও বিজ্ঞান- নতুন দিগণ্ত (১৯৯১)
  • আমাদের শিক্ষা কোন পথে (১৯৯৬)

অনুবাদ

সম্পাদনা
  • আকাশের সঙ্গে মিতালী (১৯৫৬)
  • মহাবীর পরমাণু (১৯৫৭)
  • রহস্যটা জানতে হবে (১৯৫৮)
  • সেকালের জীবজন্তু (১৯৫৮)
  • তাপ (১৯৫৮)
  • আলো (১৯৬১)
  • শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন (১৯৬৫)
  • বিশ্বসৃষ্টির মালমসলা (১৯৬৫)
  • পরমাণুর রাজ্যে (মিনা শরফুদ্দিনের সঙ্গে, ১৯৭১)

অপ্রকাশিত গ্রন্থ

সম্পাদনা
  • কম্পিউটারের আশ্চর্য জগৎ

সম্পাদনা

সম্পাদনা
  • আধুনিক বিজ্ঞান (১৯৬৮)
  • সাধারণ বিজ্ঞান ২য় খণ্ড (১৯৮৩)
  • বাংলাদেশের বিজ্ঞান চিন্তা (১৯৮৮)
  • আজকের বিজ্ঞান, সংবাদপত্রে বাংলাভাষা (যুগ্ম-সম্পাদনা, ১৯৮৯)
  • এডুকেশন ফর অল (১৯৬৮)
  • এডুকেশন ইজ প্রগ্রেস (১৯৬৯)
  • ইমপ্রুভমেন্ট অফ টিচার এডুকেশন (১৯৬৯)
  • কোঅপারেশন অফ এডুকেশন, সাইন্স অ্যান্ড কালচার ইন সাউথ এশিয়ান রিজিওন (যুগ্ম-সম্পাদক, ১৯৮৭)
  • রোল অফ ইউনেস্কো ইন সাইন্টিফিক অ্যান্ড টেকনোলোজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট (যুগ্ম-সম্পাদক, ১৯৮৮)
  • বাংলা একাডেমীর বিজ্ঞান বিশ্বকোষ (প্রধান সম্পাদক, ১ম খণ্ড)
  • মাসিক কম্পিউটার বিচিত্রা (প্রধান সম্পাদক)
  • শিশু একাডেমীর শিশু বিশ্বকোষ (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ)

পুরস্কার

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সাজাহান মিয়া (২০১২)। "শরফুদ্দিন, আবদুল্লাহ আল-মুতী"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা