আবদুর রহিম (বীর বিক্রম)
শহীদ আবদুর রহিম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১] তার খেতাবের সনদ নম্বর ৭৭।[২]
আবদুর রহিম | |
---|---|
জন্ম | অজানা |
মৃত্যু | ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআবদুর রহিমের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের খেওড়া গ্রামে।[২] তার বাবার নাম খোরশেদ মিয়া এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। ছয় ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। [৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন আবদুর রহিম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। চট্টগ্রামে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তার দলের সঙ্গে ভারতে যান। প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, পরে জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। অক্টোবরের প্রথমার্ধে জেড ফোর্স সিলেট এলাকায় যায়। কিন্তু তাদের দল চিলমারীতে থেকে যায়। আবদুর রহিম রৌমারীর ঠাকুরের চরসহ আরও কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর শেষ রাতে কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত চিলমারীর আকাশ গোলাগুলিতে রক্তিম হয়ে উঠে। মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ করেছে চিলমারীর বিভিন্ন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে। একটি দলে ছিলেন আবদুর রহিম। তিনি নিয়মিত বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন স্থানে আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়া। সকালের আলো ফোটার আগেই আগুনের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে উঠল। একদিকে গোলাগুলির তীব্র শব্দ, অন্যদিকে হতবিহ্বল নারী-পুরুষের ক্রন্দনরোল—যেন মহাপ্রলয় চলছে। চিলমারীর অভিযানে শঙ্কা-সংকট কোনো অংশে কম ছিল না। চিলমারীর বিপরীতে নদের পূর্বে রৌমারী। সেখান থেকে বিশাল ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে চিলমারীতে আক্রমণ পরিচালনা করা ছিল দুঃসাধ্য একটি কাজ। ১৯৭১ সালে চিলমারীর কয়েকটি স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। এর মধ্যে ওয়াপদার অবস্থান ছিল সবচেয়ে সুরক্ষিত। ওই অবস্থানেই আবদুর রহিমরা আক্রমণ করেন সেখানে। তার দলনেতা ছিলেন আবদুল মান্নান (মুক্তিযোদ্ধা) (বীর বিক্রম)। আবদুর রহিম তার দলনেতার সঙ্গেই ছিলেন। ওয়াপদা ছাড়া চিলমারীর অন্যান্য পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। কিন্তু ওয়াপদার প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পাকিস্তানিদের কোনোভাবেই হটানো সম্ভব হচ্ছিল না। ওয়াপদার অবস্থানে ছিল বেশ কটি কংক্রিটের বাংকার। বেশির ভাগ বাংকারে ছিল মেশিনগান। এর মধ্যে একটি ছিল বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। সেখান থেকে পাকিস্তানিরা বিরামহীন গুলি ছুড়ছিল। একপর্যায়ে আবদুর রহিম জীবন বাজি রেখে ওই বাংকার ধ্বংস করার জন্য ক্রলিং করে এগিয়ে যান। বাংকারে গ্রেনেড ছোড়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। ঢলে পড়েন মাটিতে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের তিন দিক থেকে অবরোধ করে রাখে। যুদ্ধ চলে কয়েক দিন ধরে। পরে পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। শহীদ আবদুর রহিমকে সহযোদ্ধারা চিলমারীতে সমাহিত করেন। স্বাধীনতার পর তার মরদেহ সেখান থেকে তুলে কসবার কুটি-চৌমুহনী এলাকায় পুন সমাহিত করা হয়। [৪]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ রাশেদুর রহমান (তারা)। "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০২।
- ↑ ক খ ডেস্ক, প্রথম আলো। "আবদুর রহিম, বীর বিক্রম"। চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৮।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।