আনাহ মিনার
আনাহ মিনার বা মানারেত আল-আনাহ[১] ইরাকের আনাহ শহরের একটি ঐতিহাসিক একটি মিনার। এটি আব্বাসীয় আমলের শেষের দিকে উকাইলিদ রাজবংশের একজন শাসক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।[১] মিনারটি আধুনিক যুগে দুইবার ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু পরে আবার এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।[২]
আনাহ মিনার | |
---|---|
আরবি: مئذنة عانة | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
প্রদেশ | আল আনবার প্রদেশ |
যাজকীয় বা সাংগঠনিক অবস্থা | মিনার |
অবস্থা | পুনর্গঠন |
অবস্থান | |
অবস্থান | আনাহ, ইরাক |
ইরাকে অবস্থিত | |
স্থানাঙ্ক | ৩৪°২২′০৮″ উত্তর ৪২°০০′৩৪″ পূর্ব / ৩৪.৩৬৮৯৮৮° উত্তর ৪২.০০৯৫৭৯° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | মিনার |
স্থাপত্য শৈলী | উকাইলিদ |
প্রতিষ্ঠাতা | উকাইলিদ রাজবংশ |
সম্পূর্ণ হয় | ৯৯৬-১০৯৬ খ্রি |
ধ্বংস | ২০০৬ সালে এবং ২০১৬ সালে দুইবার ধ্বংস হলেও পরে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। |
বিনির্দেশ | |
মিনারের উচ্চতা | ২৮ মিটার (৯২ ফু) |
উপাদানসমূহ | পাথর, জিপসাম |
ইতিহাস
সম্পাদনামিনারটি নির্মাণ করেছিলেন উকাইলিদ রাজবংশের একজন শাসক। ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মিনারটি নির্মাণ হয়েছিলো, যা বিশেষজ্ঞরা শিলালিপি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য থেকে প্রমাণ দিয়েছে।[১]
৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসাইন ইরাকের পানির স্থিতিশীল সরবরাহ সুরক্ষিত করার জন্য ফোরাত নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ উদ্বোধন করেছিলেন, এবং ফোরাত নদীর পাশের অঞ্চলে আনাহ মিনারটি ছিল। যার ফলে আনাহ মিনারটি তখন পানিতে ডুবে যাওয়ার সম্ভাব্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল মিনারটিকে কমপক্ষে ২৮ টি টুকরো করে ভেঙে ফেলার একটি পরিকল্পনা বের করতে সক্ষম হয়েছিলো। এছাড়াও তারা বলেন যে, পরবর্তীতে মিনারটি বিপজ্জনক নেই এমন জায়গায় নির্মাণ করেছিলো।
স্থাপত্য
সম্পাদনামিনারটি লম্বাতে প্রায় ২৮ মিটার (৯২ ফুট) উচ্চতায় পৌঁছায় এবং এটি আটটি স্তর নিয়ে গঠিত। মিনারের উত্তর দিক দিয়ে, মিনারের ভিতরে প্রবেশ করা যায় এবং মিনারের ভিতরে একটি সিঁড়ি রয়েছে, যেটি একটি কক্ষের দিকে নিয়ে যায়।[১] মিনারের উপরে থাকা ছোট গম্বুজের নীচের অষ্টভুজাকার চূড়াটিতে মোট ৬৪টি কুলুঙ্গি রয়েছে (কুলুঙ্গি বলতে দেওয়ালে তাক হিসাবে ব্যবহৃত ছোট খুপরি বা খোপকে বুঝায়)।[১] মিনারটি এক প্রান্তে সামান্য হেলে থাকলেও হেলে পড়া অংশটি খুব একটা দেখা যায় না।
মিনার ধ্বংস
সম্পাদনাআনাহ মিনারটি ২০০৬ এবং ২০১৬ সালে মোট দুইবার ধ্বংস করা হয়েছিলো।
২০০৬ সালের ধ্বংসযজ্ঞ
সম্পাদনামিনারটি ২০০৬ সালে ভাংচুরের শিকার হয়েছিল।[৩] কিন্তু এটি কারা ভাংচুর করেছে এখন পর্যন্ত অজানা হিসেবে রয়ে গেছে। বাগদাদে আবু জাফর আল-মনসুরের ভাস্কর্যসহ ইরাকি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে ভাংচুরের ঘটনাগুলোকে একটি ধারাবাহিক ঘটনার মধ্যে দেখানো হয়েছিল। ইরাকি অ্যাকর্ড ফ্রন্ট শিয়া মিলিশিয়ারা সুন্নি রাজবংশের সময় নির্মিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করার জন্য শিয়া ইসলাম মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, যার মধ্যে আল-মনসুরের ভাস্কর্য, সামাররা বড় মসজিদ ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে।[৪] সৌভাগ্যবশত, ইরাকি প্রকৌশলী, শিল্পী এবং ইরাকি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষিত স্থাপত্যের নীলনকশার উপর ভিত্তি করে ইরাকি প্রকৌশলীদের কাজের দ্বারা মিনারটি ২০১৩ সালে আবার নির্মাণ করা হয়েছিলো।[৩]
২০১৬ সালের ধ্বংসযজ্ঞ
সম্পাদনাইরাকের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট[২] ২০১৬ সালের শেষের দিকে আনাহ মিনারটি ধ্বংস করেছিলো।[৫]
পুনর্গঠন
সম্পাদনাইরাকের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে মিনারটি আবারও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিলো।[৫] ধ্বংসপ্রাপ্ত মিনার থেকে বেশ কিছু খণ্ডের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো।[৫] ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে, আনাহ মিনারটি যে এলাকায় অবস্থিত ঐখানে বৈদ্যুতিক সরবরাহ বাড়ানো ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।[২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "আল-আনাহ মিনার"। archnet.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৫।
- ↑ ক খ গ "পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও সংরক্ষণ বিভাগ আনাহর প্রত্নতাত্ত্বিক মিনারের সমাপ্তির ঘোষণা দেয়"। iraqpalm.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৮।
- ↑ ক খ "পর্যটন ও পুরাকীর্তি আনবারে আনাহ মিনারটি পুনরুদ্ধারের পরে খুলেছে"। Al-Mada Newspaper। ২০১৮-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৯।
- ↑ "আনাহ মিনার"। ২০১৬-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২৫।
- ↑ ক খ গ "আনাহ মিনারের পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করতে চলেছে"। Iraqi News Agency। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৪।