আনন্দ শঙ্কর জয়ন্ত
আনন্দ শঙ্কর জয়ন্ত হলেন একজন ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিকল্পক, পণ্ডিত এবং আমলা। তিনি ধ্রুপদী নৃত্য শৈলী ভরতনাট্যম এবং কুচিপুড়িতে দক্ষতার জন্য খ্যাতিমান।[২] তিনি দক্ষিণ মধ্য রেলপথের ভারতীয় রেলওয়ে ট্র্যাফিক পরিষেবার প্রথম মহিলা কর্মকর্তা [৩] এবং তাঁর ২০০৯ সালের টেড টক ক্যান্সারের বিষয়ে অবিশ্বাস্য টেড আলোচনা য় শীর্ষ বারোটির মধ্যে স্থান পেয়েছে।[৪] তিনি তামিলনাড়ু সরকারের সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার এবং অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের কলা রত্ন পুরস্কার প্রাপক। নৃত্যকলাতে অবদান রাখার জন্য ২০০৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী প্রদান করেছে।[৫]
আনন্দ শঙ্কর জয়ন্ত | |
---|---|
জন্ম | ১৯৬১ (বয়স ৬২–৬৩) [টীকা ১][১] |
পেশা | ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী কোরিওগ্রাফার |
কর্মজীবন | ১৯৭২ সাল থেকে |
পরিচিতির কারণ | ভরতনাট্যম কুচিপুড়ি |
দাম্পত্য সঙ্গী | জয়ন্ত |
পিতা-মাতা | জি এস শঙ্কর সুভাষিনী শঙ্কর |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার কলা রত্ন পুরস্কার নৃত্য চূড়ামণি কলাইমামানি পুরস্কার নাট্য ইলাবরাসি নৃত্য কলাসাগর গুরু দেবপ্রসাদ পুরস্কার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দেবী পুরস্কার অ্যালায়েন্স ইউনিভার্সিটি নৃত্য সরস্বতী বিদ্যা তপস্বী পুরস্কার |
ওয়েবসাইট | anandashankarjayant |
জীবনী
সম্পাদনাআনন্দ শঙ্কর, তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলার এক তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা জি এস শঙ্কর ছিলেন ভারতীয় রেলের একজন কর্মকর্তা, এবং মা সুভাষিনী ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং সংগীতশিল্পী। তিনি হায়দ্রাবাদে বড় হয়ে ওঠেন এবং তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা হয় সেকান্দ্রাবাদের সেন্ট অ্যানস হাই স্কুলে।[৬] শারদা কেশব রাওয়ের অধীনে তিনি ৪ বছর বয়স থেকে ধ্রুপদী নৃত্য শিখতে শুরু করেছিলেন। পরে তিনি কে. এন. পাক্কিরিস্বামী পিল্লাইএর কাছে প্রশিক্ষণ নেন এবং ১৯৭২ সালে ১১ বছর বয়সে তিনি রুক্মিনী দেবী অরুন্দলের কলাক্ষেত্রতে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি পদ্মা বালাগোপাল, শারদা হফম্যান এবং কৃষ্ণবেণী লক্ষ্মণের মতো শিক্ষকদের অধীনে ভরতনাট্যম প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ছয় বছর অধ্যয়নের পরে, তিনি ভরতনাট্যম, কর্ণাটকী সংগীত, বীণা, নৃত্য তত্ত্ব এবং দর্শনে বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর ডিপ্লোমা এবং স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেছিলেন। তিনি ১৭ বছর বয়সে হায়দরাবাদে ফিরে এসে আট জন ছাত্রকে নিয়ে একটি নৃত্য স্কুল 'শঙ্করানন্দ কলাক্ষেত্র' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন এটি একটি নৃত্য একাডেমিতে পরিণত হয়েছে, যেখানে যুক্ত আছেন পার্থ ঘোষ, মৃণালিনী চুন্ডুরি, সতীরাজু বেনুমাধব এবং দোলন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত শিক্ষকেরা।[৭] হায়দরাবাদে, তিনি পশুমার্থী রামলিঙ্গ শাস্ত্রীর অধীনে কুচিপুড়িও শিখেছিলেন।[৮] একইসাথে, তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করার পরে, তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভারতীয় রেলওয়ে ট্রাফিক পরিষেবা (আইআরটিএস) তে যোগ দেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ মধ্য রেলপথের পরিষেবার প্রথম মহিলা কর্মকর্তা। [৯] আইআরটিএসে কর্মরত থাকাকালীন তিনি ইউজিসি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে আর্ট হিস্ট্রিতে এমফিল এবং পর্যটন ক্ষেত্রে ডক্টরাল ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জনের জন্য অধ্যয়ন চালিয়ে যান; তাঁর গবেষণা পত্রটি ছিল ভারতে পর্যটন প্রচার - রেলের ভূমিকা ।[৮]
২০০৮ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কুচিপুড়ি সম্মেলন ফিরে আসার পরে, তাঁর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা করা হয়।[১০] ২০০৯ সালের নভেম্বরে, টেড টকে তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি নৃত্যের ভঙ্গিমা সহযোগে একটি বক্তৃতা দিলেন,[১১] এটি ক্যান্সারের বিষয়ে অবিশ্বাস্য টেড আলোচনা য় শীর্ষ বারোটির মধ্যে স্থান পেয়েছে।[৯][১২] দু'বছর ক্যান্সারের চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে তিনি আবার তাঁর নৃত্যজীবন শুরু করেছিলেন। তাঁর নৃত্য একাডেমির তত্ত্বাবধানে, তিনি অনেকগুলি নৃত্যের সমাহার রচনা করেছিলেন, যার মধ্যে ছিল হোয়াট অ্যাবাউট মি? (১৯৯৯) এবং পরবর্তীকালে নৃত্যের গল্প - পঞ্চতন্ত্র , এবং কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মঞ্চে পরিবেশন করেছেন।[১৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতামিলনাড়ু সরকার ২০০২ সালে আনন্দ শঙ্করকে কলাইমামানি পুরস্কারে ভূষিত করে।[১৬] ২০০৪ সালে, তিনি নতুন দিল্লির শ্রী সম্মুখানন্দ সংগীত সভার কাছ থেকে নাট্য ইলাবরাসি উপাধি পেয়েছিলেন[১৭] এবং এর দু'বছর পরে, ২০০৬ সালে শ্রীকৃষ্ণ গণসভা, চেন্নাই তাকে নৃত্য চূড়ামণি উপাধিতে ভূষিত করে।[১৮] ২০০৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী প্রদান করে,[৫] একই বছর তিনি কালাসাগরম সেকান্দারবাদ থেকে থেকে 'নৃত্য কলাসাগর' উপাধিটি পেয়েছিলেন।[১৯] এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার তাকে ২০০৮ সালে কালা রত্ন পুরস্কারের জন্য উগাদি দিবসের সম্মান তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। [২০] ভরতনাট্যম নৃত্যের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ২০০৯ সালে তিনি সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।[২১] ২০১০ সালে বিশাখা সংগীত একাডেমি থেকে তিনি পেয়েছিলেন নট্য কলাসাগর উপাধি এবং ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন তিনটি পুরস্কার, ত্রিধারার গুরু দেবপ্রসাদ পুরস্কার,[২২] গতিশীলতা এবং উদ্ভাবনের জন্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দেবী অ্যাওয়ার্ড' এবং বেঙ্গালুরুর অ্যালায়েন্স ইউনিভার্সিটি থেকে নৃত্য সরস্বতী উপাধি।[২৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাটীকা
সম্পাদনা- ↑ 53 years old as of 2015
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "A life in 'mudra'"। Live Mint। ২৬ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Ananda Shankar Jayant: She who danced her way through cancer and conquered it"। India Today। ৩ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Ananda Shankar Jayant : The First Lady IRTS Officer of South Central Railway, Indian Railways" (পিডিএফ)। Delhi University। ২০১৫। ১১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "12 Incredible TED Talks on Cancer"। Masters in Healthcare। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ ক খ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৩। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Headmaster Ananda Shankar Jayant – Part 1"। August 20, 2011। Coffee with Sundar। মে ১, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Shankarananda Kalakshetra presents Kavyanjali"। Narthaki। ২৩ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ Lalitha Venkat (২৩ নভেম্বর ২০০৬)। "Dance - the essence of my life"। Narthaki। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ ক খ "The cancer conqueror"। ReDiff। ১ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Padmashri Ananda Shankar Jayant – Part 2"। August 20, 2011। Coffee with Sundar। মে ১, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Ananda Shankar Jayant: Fighting cancer with dance"। Web video। TED Ideas Worth Spreading। নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Ananda Shankar Jayant on HBS"। India Conference at Harvard। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Dance helped me to shift my mind away from cancer"। The Hindu। ২৫ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Ananda Shankar Jayant fights cancer with dance"। Pharma Info। ২০১৬। ২৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ Nirmala Garimella (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "In Conversation With Dr. Ananda Shankar Jayant"। Interview। Lokvani। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Kalaimamani awards announced"। The Hindu। ১১ অক্টোবর ২০০৩। ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Tyagaraja music and dance fest / New Delhi"। Kutcheri Buzz। ফেব্রুয়ারি ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Nritya Choodamani Awardees Gallery"। Krishna Gana Sabha। ২০১৬। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Highlights - November 2007"। Narthaki। ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "29 selected for Ugadi Puraskarams"। The Hindu। ৭ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "SNA Awardees"। Sangeet Natak Akademi। ২০১৬। ৩১ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "9th Guru Debaprasad Award Festival"। Narthaki। ২২ অক্টোবর ২০১৫। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Nrithya Saraswathi award for Prof. Anuradha"। University of Hyderabad। ১২ মে ২০১৫। ২৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "নাচের সাথে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা"। Ananda Shankar Jayant (TED Talk Video)। Amara.org। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৬।
- Aparajita Mishra (২ নভেম্বর ২০১৫)। "আনন্দ শঙ্কর জয়ন্তের সাথে দেখা করুন যিনি নাচ দিয়ে ক্যান্সারে বিরুদ্ধে 'বিজয়ী' হয়েছেন। দুর্দান্ত না?"। Web feature। Story Pick। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬।