আদমজী হাজী দাউদ
স্যার আদমজী হাজী দাউদ বাওয়ানি (৩০ জুন ১৮৮০ - ২৭ জানুয়ারি ১৯৪৮)[৪] ছিলেন একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী যিনি আদমজী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের একজন কর্মীও ছিলেন।[৫]
আদমজী হাজী দাউদ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৭ জানুয়ারি ১৯৪৮ | (বয়স ৬৭)
পেশা | ব্যবসায়ী |
দাম্পত্য সঙ্গী | মরিয়ম বাই (বি. ১৮৯৮)[২] |
সন্তান | আবদুল ওয়াহিদ আদমজী (পুত্র) জাকারিয়া আদমজী (পুত্র) গুল মুহাম্মাদ আদমজী (পুত্র)[৩] |
জীবনের প্রথমার্ধ
সম্পাদনাআদমজী হাজী দাউদ ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের কাঠিয়াওয়ারের জেতপুরে একটি মেমন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই তিনি বার্মায় চলে যান এবং একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কর্মজীবনের প্রথম কয়েক বছর কেটেছে চাল, ঘরের চুলা জ্বালানোর জন্য ম্যাচ-বই তৈরি এবং পাটের ব্যবসায়।
১৯২২ সাল নাগাদ তিনি পর্যাপ্ত সম্পদ সংগ্রহ করেছিলেন এবং পণ্যের বাজারে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি অর্জন করেছিলেন, যা তাকে তার প্রথম শিল্প উদ্যোগ হিসেবে রেঙ্গুনে একটি ম্যাচ কারখানা স্থাপন করতে সক্ষম করে। ১৯২৭ সালে তিনি কলকাতায় একটি পাটকল প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতে ফিরে আসেন। আদমজী জুট মিলস লিমিটেড ছিল তৃতীয় পাটকল যা একজন ভারতীয় দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশ ভারতে প্রথম মুসলিম মালিকানাধীন পাবলিক কোম্পানি। এই উদীয়মান উপযুক্ত স্থান দখল করার জন্য আদমজী বিড়লা জুটের জি ডি বিড়লার সাথে সেই সময় পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই একচেটিয়া বাণিজ্যে প্রবেশ করেন।
তিনি একজন আগ্রহী শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবীও ছিলেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন ও সাহায্য করেছিলেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ তার অর্থায়নেই প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃক পরিচালিত হচ্ছে।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
সম্পাদনা- প্রতি তাঁর সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালের জুন মাসে তাঁকে নাইট উপাধি প্রদান করে।[৬]
- পাকিস্তান সরকার ১৯৯৯ সালের ১৪ই আগস্ট স্যার আদমজি হাজী দাউদকে 'স্বাধীনতার অগ্রদূত' শিরোনামে একটি ডাকটিকিট তৈরি করে সম্মানিত করে।[৫]
- আদমজি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নামকরণ করা হয়েছে তাঁর পরিবারের নামে।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৪০-এর দশকে দাউদ ভারত ও বার্মার ব্যবসায়িক বৃত্তে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তার স্বীকৃতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বারা স্বীকৃত হয়েছিল, যিনি একজন ভাল বন্ধু হয়েছিলেন এবং তাকে মুসলমানদের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপদেষ্টা নিযুক্ত করেছিলেন, যা অবশেষে পাকিস্তান সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করেছিল। দাউদ সমগ্র মেমন এবং অন্যান্য গুজরাতি মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেককে পাকিস্তানে চলে যেতে রাজি করান। জিন্নাহর অনুরোধে আবারও এই দৃষ্টিভঙ্গির কথা মাথায় রেখে তিনি মির্জা আহমদ ইস্পাহানির সাথে দুটি বড় প্রতিষ্ঠান যেমন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের পূর্বসূরী কোম্পানি ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] এর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে মুসলমানদের পরিবহন প্রদানের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা এবং নতুন দেশ পাকিস্তানে ব্যাংকিং সুবিধা তৈরি করা।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার
সম্পাদনাপাকিস্তান তৈরি হওয়ার পরে দাউদ এবং তার ছেলেরা পূর্ব (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান উভয় স্থানেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে আর্থিক অসুবিধার পর জিন্নাহ তাকে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। এই বৈঠকের সময়ই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পরে ২৭ জানুয়ারি ১৯৪৮-এর রাতে মারা যান। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার মৃত্যুতে বলেছিলেন যে তার মৃত্যু মুসলিম ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করবে যা পূরণ করা কঠিন হবে। জিন্নাহ এটিকে পাকিস্তানের জন্য একটি "জাতীয় ক্ষতি" বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে আদমজী হাজি দাউদ একজন অনুগত মুসলিম ছিলেন এবং পাকিস্তানের জন্য আমাদের সংগ্রামে মহান সেবা করেছিলেন।[৭]
২৭ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অর্থ দল সাহায্যের জন্য আদমজী দাউদের সাথে যোগাযোগ করেন। কারণ ভারত পাকিস্তানের জন্য তহবিল ঋণের অংশ ছেড়ে দেয়নি। তাই সদ্য সৃষ্ট দেশ পাকিস্তান আর্থিক সংকটে পড়েছিল। আদমজী হাজী দাউদ তার সমস্ত শিল্প সম্পদ এবং ব্যক্তিগত সম্পদের জামানতে সুরক্ষিত একটি 'ব্ল্যাঙ্ক চেক' লিখেছিলেন যা দেশকে তার আর্থিক সংকট সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করেছিল।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Gayer, Laurent (২০১২)। Muslims in Indian Cities: Trajectories of Marginalisation (ইংরেজি ভাষায়)। Hurst। আইএসবিএন 9781849041768।
- ↑ "Adamjee Group of Companies"। adamjees.com। ১২ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Adamjee Group of Companies"। adamjees.com। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ Chronology of Life Achievements of Sir Adamjee Haji Dawood in Souvenir: Launching Ceremony of A Biography of the Merchant Knight Adamjee Haji Dawood, Karachi 2005 pg 35, 36
- ↑ ক খ গ Profile of Adamjee Haji Dawood on Dawn (newspaper), Published 10 October 1999.
- ↑ "নং. 34518"। দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জুন ১৯৩৮।
- ↑ ক খ http://www.amazingpakistanis.com/sir-adamjee-haji-dawood.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুন ২০২৩ তারিখে, A tribute to Adamjee Haji Dawood on amazingpakistanis.com website.