আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ
আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ হল ঋক্ বেদের একটি শ্লোক। এর অর্থ আত্মনো মোক্ষার্থং অর্থাৎ নিজের মোক্ষলাভের জন্য, চ অর্থাৎ এবং, ও জগদ্ধিতায় বা জগৎ হিতায় অর্থাৎ জগতের সকলের মঙ্গলের জন্য।[১] বিবেকানন্দ প্রাত্যহিক জীবনে প্রায়শই এটি ব্যবহার করতেন এবং এটি ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন এবং সংশ্লিষ্ট রামকৃষ্ণ মঠের মূলমন্ত্র তথা নীতিবাক্য হয়ে ওঠে।[২][১][৩]
এই নীতিবাক্যটি মানব জীবনের দুটি মূল লক্ষ্য নির্দেশ করে, একটি হল নিজের আত্মার পরিত্রাণ অনুসন্ধান করা এবং অন্যটি হল বিশ্বের কল্যাণের নিজেকে নিয়োজিত করা।[১]
পটভূমি
সম্পাদনাবাংলা লিপিতে | আইএএসটি | অনুবাদ |
---|---|---|
আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ [১] |
Ātmano mokṣārtham jagaddhitāya ca |
আত্ম বা নিজের মোক্ষলাভের জন্য এবং জগতের সকলের মঙ্গলের জন্য[১] |
উক্তিটিতে দুটি বার্তা রয়েছে। একটি হল নিজের আত্মার পরিত্রাণ অন্বেষণ করা এবং অন্যটি হল জগতের কল্যাণ করা।[১] এই নীতিবাক্যটি 'আত্মা' (আত্মা) এবং 'জগৎ হিতায়' (মানবতার সেবা) এই দুটি ভিন্ন ও সুস্পষ্ট দিককেও দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে, যা নিজের প্রচেষ্টায় অর্জন করতে হয়।[৪] এটি অর্জন করতে নিরন্তর মানুষের প্রচেষ্টা কেবল নিজের পরিত্রাণের জন্যই নয় বৃহত্তর মানবতার সেবা প্রদানের জন্যও প্রয়োজনীয়।[৫]
স্বামী বিবেকানন্দের আত্মার মুক্তি ও পরিনির্বাণ নায়ে একটি প্রশ্নে উত্তরে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাকে বৈদিক স্তেত্রের এই লাইনটি বলেছিলেন। এরই সাথে রামকৃষ্ণ তখন বিবেকানন্দকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন যে ব্যাপারটা একটা বিশাল বটবৃক্ষের মতো, যা কেবল ছায়াই দেয় না বরং মানুষকে শান্তিও প্রদান করে থাকে। রামকৃষ্ণের এই নির্দেশনার ফলস্বরূপ বিবেকানন্দ দুটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, যথা - রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশন, যা জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল। দুটি প্রতিষ্ঠানের নীতিবাক্যই ছিল "আত্মনো মোক্ষার্থম জগদ্ধিতায় চ - আত্মমুক্তি এবং মহাবিশ্বের মঙ্গল"। এই সংজ্ঞায়ন রামকৃষ্ণ আদেশের আদর্শ হয়ে ওঠে।[৬] বিবেকানন্দের তৈরি এই নীতিবাক্যটিতে ধর্মান্তরিতকরণের কোনো আধিক্য নেই, তবে এটি একটি দর্শন যা সমস্ত ধর্মের লোকেদের দ্বারাই সাদরে গ্রহণযোগ্য।[৭]
প্রভাব
সম্পাদনাএই নীতিবাক্যটি ব্যবসায় ব্যবস্থাফনার "শ্রেলেকার মডেল"-এর উদ্ভাবন করেছে, যেখানে কাজকে বিশ্বের মঙ্গল করার একটি সুযোগ হিসাবে একইসঙ্গে জীবনের আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত অগ্রগতি অর্জন বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৮]
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এই শ্লোকের নীতির প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে।[৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Singh 2005, পৃ. 71।
- ↑ "IDEOLOGY of Ramakrishna Math and Ramakrishna Mission"। Ramakrishna Mission। ২০১৩-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Sarvabhutananda 2012, পৃ. 30।
- ↑ Nanjundiah 2007, পৃ. 6।
- ↑ Vanamali 1998, পৃ. 1।
- ↑ "Philosophy of the Ramakrishna Order"। Ramakrishna Math, Pune। ২৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Nanjundiah 2007, পৃ. 11।
- ↑ Banerjee 2005, পৃ. 135।
- ↑ Anand Krishna (২ অক্টোবর ২০০৯)। "The Quintessence of Religion"। The Bali Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩।