আত্তিয়া হোসেন

ভারতীয় লেখিকা

আত্তিয়া হোসেন (১৯১৩–১৯৯৮) একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক, লেখক, সম্প্রচারক, সাংবাদিক এবং অভিনেতা ছিলেন।[][] তিনি ইংরেজিতে লিখতেন, তার মাতৃভাষা উর্দুর সঙ্গে সেটি অনুরণিত হত।[] যদিও তিনি শুধুমাত্র দুটি কথাসাহিত্যের বই প্রকাশ করেছেন, উভয়ই প্রশংসিত হয়েছে। বই দুটি হল আধা-আত্মজীবনীমূলক সানলাইট অন এ ব্রোকেন কলাম এবং ফিনিক্স ফ্লেড নামে ছোট গল্পের একটি সংগ্রহ। বিংশ শতাব্দীর শেষে আধা-নির্বাসনে, ইংল্যান্ডে তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল, ঔপনিবেশিক সাহিত্যের পরে তার অবদান স্বীকার করে, নতুন প্রজন্মের মন্তব্যকারী এবং যোগাযোগকারীদের সঙ্গে তার অনুরণন অব্যাহত ছিল। অনিতা দেসাই, বিক্রম শেঠ, আমির হুসেন এবং কামিলা শামসির মত তরুণ প্রজন্মের লেখকেরা, তার কাজের জন্য প্রশংসা প্রকাশ করেছেন, এবং তার প্রভাব স্বীকার করেছেন।[]

আত্তিয়া হোসেন
জন্ম১৯১৩
লখনউ, ভারত
মৃত্যু১৯৯৮ (বয়স ৮৪–৮৫)
পেশালেখক
জাতীয়তাভারতীয়
ধরনউপন্যাস
দাম্পত্যসঙ্গীআলি বাহাদুর হাবিবুল্লাহ (১৯০৯–১৯৮২)
সন্তানওয়ারিস হোসেন, শামা হাবিবুল্লাহ

পটভূমি এবং শিক্ষা

সম্পাদনা

আত্তিয়া অবিভক্ত ভারতে, উত্তরপ্রদেশের লখনউ এর, আউধের উদার কিদোয়াই বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ হোসেন কিদোয়াই, গাদিয়ার ক্যামব্রিজ শিক্ষিত তালুকদার ছিলেন, এবং মা, বেগম নিসার ফাতিমা কাকোরির আলভি পরিবার থেকে এসেছিলেন। তার পিতার কাছ থেকে তিনি রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের প্রতি গভীর আগ্রহ অর্জন করেন। কবি ও পণ্ডিত সমৃদ্ধ মায়ের পরিবার থেকে তিনি উর্দু, ফারসি ও আরবি ভাষায় বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তার পরিবেশ থেকে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি, লা মার্টিনিয়ার স্কুল ফর গার্লস এবং লখনউ এর ইসাবেলা থোবার্ন কলেজে পড়ার পর লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরের পড়া শেষ করেন।[] হোসেন দুটি সংস্কৃতিকে নিয়ে বড় হয়েছেন, ইংরেজি, ইউরোপীয় সাহিত্যের পাশাপাশি কোরানও পড়েছেন তিনি।[]

আত্তিয়ার বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার সংগ্রাম জোরদার হচ্ছিল, এবং স্বাভাবিক ভাবেই যুগের প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে তার যোগাযোগ হচ্ছিল।[] আত্তিয়ার বাবা এবং মতিলাল নেহরু ছিলেন সমসাময়িক এবং আদালতে যোগাযোগের সুবাদে বন্ধু। ১৯৩৩ সালে, সরোজিনী নাইডু আত্তিয়াকে উৎসাহিত করেন, "শৈশব থেকে নারীহিসাবে আমার আদর্শ", এবং আত্তিয়া কলকাতার অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্সে যোগ দেন।[] তার নিজের কথায়, আত্তিয়া বলেছেন, "আমার বন্ধু, মুল্ক রাজ আনন্দ, সাজ্জাদ জহির ও সাহেবজাদা মাহমুদুজ্জাফর, এঁদের মাধ্যমে আমি প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনে বামদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে খুব বেশি প্রভাবিত ছিলাম, এবং ডেসমন্ড ইয়াং আমাকে দ্য পায়োনিয়র এর জন্য লিখতে বলেছিলেন।"[] তিনি কলকাতার দ্য স্টেটসম্যান এর জন্যও লিখেছিলেন। তিনি তার পরিবারের অমতে এক সম্পর্কিত ভাই আলি বাহাদুর হাবিবুল্লাহকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই সন্তান ছিল, শামা হাবিবুল্লাহ এবং ওয়ারিস হোসেন। ১৯৪০ এর দশকের প্রথম দিকে এই দম্পতি বোম্বে চলে গেলেন, যেখানে আলি বাহাদুর সরকারি চাকরি করছিলেন, প্রথমে বস্ত্র কমিশনে এবং পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের পর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সরবরাহকারী কমিশনার হিসাবে। এখানে, "আত্তিয়া প্রভাব" কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। তিনি তার বাড়িটিকে, শৈশবে তাদের মুক্ত গৃহের ব্যাপ্তি রূপে গড়ে তোলেন, সেটি হয়ে ওঠে একটি লখনউই 'আড্ডা'। সেই আড্ডায় থাকতেন লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, শহরের সামাজিক ও বাণিজ্যিক দুনিয়ার সদস্যরা। আত্তিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য রমেশ থাপার তার ভাবী স্ত্রী তরুণী রাজ থাপারকে এনেছিলেন, আত্তিয়াকে তিনি বলতেন "পুরুষের মনের অধিকারী মহিলা"।[] আল বাহাদুর হাবিবুল্লাহ ১৯৪৭ সালে, ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে, তার পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডে চলে যান, নতুন তৈরি ভারতীয় বাণিজ্য হাইকমিশনে কাজ করতে শুরু করেন। অবিভক্ত ভারত যখন ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হয়ে গেল, তখন দেশের বিভাগ এবং দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিচ্ছেদ আত্তিয়াকে কষ্ট দিত। তিনি বলেছিলেন, "আমরা এমন একটি প্রজন্ম যাদের হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গেছে,"।

একজন মুসলমান ও ভারতীয় উভয় হিসাবে তার ঐতিহ্য নিয়ে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে, তিনি ইংল্যান্ডে থাকার জন্য সরকারী বিকল্পটি বেছে নিয়েছিলেন।

পরবর্তী জীবনে তিনি লিখেছেন, "আমি এখানে, এই দেশকে বাস করার জন্য বেছে নিলাম, যে আমাকে অনেক দিয়েছে; কিন্তু আমার অন্তঃকরণ থেকে এই কথা ভুলতে পারিনা যে, অন্য এক দেশে ৮০০ বছর ধরে বসবাসকারী পূর্বপুরুষের রক্ত আমার শরীরে বইছে।"[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Distant Traveller, new and selected fiction: edited by Aamer Hossein with Shama Habibullah, with foreword and afterword by them, and introduction by Ritu Menon (Women Unlimited, India 2013). This contains the first publication of a section of Attia Hosain's unfinished novel, No New Lands, No New Seas.
  2. Ghoshal, Somak (১৫ আগস্ট ২০১৭)। "India at 70: A Muslim Woman's Story of Nationalism, Partition and her awakening into Feminism"HuffPost 
  3. Hussein, Aamer (৩১ জানুয়ারি ১৯৯৮)। "Obituary: Attia Hosain"। The Guardian 
  4. Hussein, Aamer (৩১ জানুয়ারি ১৯৯৮)। "Passages from India"The Guardian 
  5. Khan, Naseem (৫ ফেব্রু ১৯৯৮)। "Obituary: Attia Hosain"The Independent, UK 
  6. Hosain, Attia (১৯৯৮)। "Deep Roots"। Davis, Ferdinand; Khan, Naseem। Voices of the Crossing। The impact of Britain on writers from Asia, the Caribbean and Africa। Serpents Tail। পৃষ্ঠা 19। 
  7. Thapar, Raj (১৯৯১)। All These Years: A Memoir। Seminar Publications। 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা
  • The Literary Estate of Attia Hosain, 1928-1998. Diaries, letters, images, notes.
  • A part of the whole, Rakshandha Jalil, The Hindu, 2 Mar 2013.
  • I am a Universalist-Humanist, Nilufer E. Bharucha. Biblio 3.7-8 (July-August 1998).
  • Unsettling Partition: Literature, Gender, Memory. Jill Didur, 2007.
  • Writers of the Indian Diaspora - A Diptych Volume. R.K.Kaul & Jasbir Jain. "Attia Hosain".
  • An image of India by an Indian Woman: Attia Hosain's Life and Fiction - Unpublished MA thesis. Laura Bondi. For University Degli Studio Venezia, 1993.
  • Dwelling in the Archive: Women Writing House, Home, and History in Late Colonial India. Antoinette Burton. Oxford: Oxford University Press, 2003.
  • Hosain, Attia Shahid. Anita Desai. Oxford Dictionary of National Biography
  • Attia Hosain, Her Life and Work. Lakshmi Holmstrom. Indian Review of Books 8-9, 1991.
  • The Heart in Pieces Generation, Mushirul Hasan. The Indian Express, 21 Feb 1998.
  • The Silent Gap. Shashi Deshpande. Biblio May-June 2013.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

ভিডিও তথ্যসূত্র

সম্পাদনা