আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের একটি অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠন। ১৯৪৪ সালে লুৎফুর রহমান বর্ণভী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরম্ভ হয় ১৯৫৪ সালে। শুরু থেকে সংগঠনটির বিস্তারে শামসুল হক ফরিদপুরী, মুশাহিদ আহমদ, তাজুল ইসলাম সহ প্রমুখ আলেম অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগঠনটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। সংগঠনটির বর্তমান আমীর রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী। সংগঠনের মূল কেন্দ্র জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণায় অবস্থিত।
গঠিত | ১৯৪৪ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | লুৎফুর রহমান বর্ণভী |
আইনি অবস্থা | ধর্মীয় সংগঠন |
উদ্দেশ্য | কুরআন–সুন্নাহর আলোকে সুসংগঠিত খোদাভীরু জাতি ও সমাজ গঠন করা এবং এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা |
সদরদপ্তর | জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা, , শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার |
যে অঞ্চলে | বাংলাদেশ |
আমীর | রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী |
নায়েবে আমীর |
|
সহায়করা |
|
ওয়েবসাইট | anjumanehefajoteislam |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৪৪ সালে স্থানীয় যুবকদের সংগঠিত করতে লুৎফুর রহমান বর্ণভী ‘হেফাজতে ইসলাম কমিটি’ গঠন করেন।[১] ১৯৪৫ সালে মৌলভীবাজার জেলার বালিকান্দিতে এর কার্যক্রম আরম্ভ হয়। ১৯৪৮ সালে লুৎফুর রহমান বর্ণভীকে আমীর নিযুক্ত করা হয়। তখন থেকে এটি আঞ্চলিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরম্ভ করে। সিলেটের বন্দরবাজার জামে মসজিদে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত আলেমদের একটি সভায় সংগঠনটির নাম ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম পাকিস্তান’ নির্ধারিত হয়। লুৎফুর রহমান বর্ণভীকে পুনরায় আমীরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর সংগঠনের নাম থেকে পাকিস্তান বাদ দিয়ে ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ করা হয়। নামের শুরুতে আঞ্জুমান থাকলেও এটি ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই সংগঠনটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে মাসিক হেফাজতে ইসলাম প্রকাশিত হয়।[১]
প্রতিষ্ঠার পর সিলেট সহ উত্তরবঙ্গের আট জেলার দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুর রহমান বর্ণভী, ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন শামসুল হক ফরিদপুরী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তাজুল ইসলাম।[১] বর্ণভীর ডাকে মুশাহিদ আহমদও এই কাজে সাড়া দেন।[২] ষাটের দশকে ঢাকার সিদ্দিকবাজার জামে মসজিদে সংগঠনটির একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের আহমদ আলী বাশকান্দি ও ভারতের জাতীয় পরিষদের সদস্য আবদুল জলীল বদরপুরী সংগঠনটিন প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন।[২]
১৯৯৯ সালে সংগঠনটির যুক্তরাজ্য শাখা গঠিত হয় যার নাম ‘হেফাজতে ইসলাম ইউকে’। ১৯৯৪ সালে এটি বাংলাদেশে ‘হেফাজতে ইসলাম অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস’ চালু করে। অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসের কার্যালয় ছিল মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গলে। লাশ ও রোগী বহনকারী চারটি অ্যাম্বুল্যান্স ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিত। তবে আর্থিক কারণে ২০১১ সালের দিকে অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে এটি ‘হেফাজতে ইসলাম মেডিক্যাল সেন্টার’ ও ‘হেফাজতে ইসলাম সমাজসেবা সংস্থা’ চালু করে। ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে স্থাপিত হয়, ‘হেফাজতে ইসলাম সেন্টার লন্ডন’।[১]
সংগঠনটির ৩টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। ছাত্র ও যুবকদের জন্য আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম ছাত্র পরিষদ ও আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম যুব পরিষদ এবং মহিলাদের জন্য আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম।[৩]
প্রথম আমীর লুৎফর রহমান বর্ণভীর মৃত্যুর পর আমীর হন খলিলুর রহমান বর্ণভী। তার মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর আমীর হন রশীদুর রহমান ফারুক বর্ণভী। একই সময় দুইজনকে নায়েবে আমীর মনোনীত করা হয়: শেখ নুরে আলম হামিদী, শেখ বদরুল আলম হামিদী।[৪]
লক্ষ্য ও কর্মসূচি
সম্পাদনাসংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল, ‘কুরআন–সুন্নাহর আলোকে সুসংগঠিত খোদাভীরু জাতি ও সমাজ গঠন করা এবং এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা’।[৩]
লক্ষ্য পূরণের জন্য সংগঠনটি ৬টি মৌলিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেগুলো হল:[৩]
- দাওয়াত
- সংগঠন
- তালিম
- তরবিয়ত ও তাজকিয়া
- সমাজসেবা
- আন্দোলন
মাসিক হেফাজতে ইসলাম
সম্পাদনাআঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুখপত্র মাসিক হেফাজতে ইসলাম। এটি জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা থেকে প্রকাশিত হয়। লুৎফুর রহমান বণর্ভী ১৯৭৩ সালে এই পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন আবদুর রহব ইসামতি, পরবর্তীতে আবদুল গফুর মোমেনশাহী। প্রথমে পত্রিকাটি হাতে লিখে প্রকাশ করা হত। এভাবে কিছুকাল চলার পর পাঠক ও গ্রাহকদের আগ্রহে হুসাইন আহমদ মাদানির নামানুসারে ‘মাদানি প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ প্রেস থেকে পত্রিকাটি দীর্ঘদিন নিয়মিত চলার পর দিন দিন পাঠক চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতঃপর পত্রিকাটি ১৯৮৩ সালের জুন মাস থেকে আবদুস সালাম চৌধুরী ও পরবর্তীকালে আবদাল হোসেন খানের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর মাঝখানে অনিয়মিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের ভক্তদের বিশেষ সহযোগিতায় মার্চ ২০০৪ সাল থেকে এটি মাসিক হিসেবে নিয়মিতভাবে জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।[১][৫]
বিভ্রান্তি
সম্পাদনাঅনেকেই অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নামকরণ করা হয়েছে এই সংগঠনের নাম থেকে এবং একারণে তারা বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।[১] ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা সন্দেহে এই সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শেখ নূরে আলমকে গ্রেফতার করা হয়।[৬] তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা বলেন, সংগঠনটির নামের আগে আঞ্জুমান রয়েছে। শব্দের এই পার্থক্যের কারণে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।[১]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ নূর, আহমেদ (৫ মে ২০২১)। "'হেফাজত' নামটাও ছিনতাই করা"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ গোলাম ছরোয়ার ২০১৩, পৃ. ৩৫২।
- ↑ ক খ গ "আঞ্জুমান সম্পর্কে"। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "আঞ্জুমানে হেফাজতের নতুন আমির মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক"। ঢাকা টাইমস। ১৫ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ গোলাম ছরোয়ার ২০১৩, পৃ. ৩৬১।
- ↑ "আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম নেতার মুক্তি চায়"। ডেইলি স্টার। ১৬ মার্চ ২০১৩।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- গোলাম ছরোয়ার, মুহা. (২০১৩)। বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার (ফিকহ চর্চায় পত্র-পত্রিকা) (পিডিএফ)। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (গবেষণাপত্র)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩৫২, ৩৫৩। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২১।