আজরাইল

মৃত্যুর ফেরেশতা


আজরাইল (ইংরেজি: Azrael) একজন দেবদূত বা ফেরেশতা যার কাজ হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশানুযায়ী প্রাণীর প্রাণ সংহার করা।[] ইসলাম ধর্মের বর্ণনানুসারে মৃত্যুকালে ফেরেশতা আজরাইল ব্যক্তির পৃথিবীর আমল বা কৃতকর্ম অনুযায়ী ভালো মানুষের কাছে পবিত্ররূপে আর পাপীদের কাছে ভয়ংকররূপে আবির্ভূত হন এবং মানুষের জান বা রুহ কবজ করেন।

আজরাঈল
עֲזַרְאֵל
عزرائيل
ব্রেন্ডন কোলের মতে, এই চিত্রকর্মটি ১৮৯২ সালের ডেলভিলের কবিতা "আজরাঈল"-এর সাথে সম্পর্কিত, যা তাঁর বই Les Horizons Hantés-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
মৃত্যুর ফেরেশতা
সংশ্লিষ্ট ধর্মসমূহইসলাম এবং ইহুদি ধর্ম (পরবর্তীটির মধ্যে আনুষ্ঠানিক নয়)
বৈশিষ্ট্যসমূহআর্চএঞ্জেল; মৃত্যুর পরিপথ নির্দেশক; পাখা; চাদর।
সম্পর্কজিবরাঈল, মিকাইল, এবং ইসরাফিল (ইসলামে)
বিকল্প বানান
  • এলজারʾēল
  • ʿআজরাʾīল
  • ইজরাʾিল
  • আজরাঈল
Ezrā’ël
গ্রন্থে উপস্থিতি আপোক্যালিপস অফ পিটার

নামকরণ

সম্পাদনা

ইংরেজিতে আজরাইল শব্দটি আরবি ʿIzrāʾīl (عزرائيل) অথবা Azra'eil (عزرایل) থেকে আর্বিভূত হয়েছে। ইসলাম , শিখ ও হিব্রুদের ধর্মে এর উপস্থিতি আছে। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে আজরাইল নামের কোন অস্তিত্ব নাই। পরিবর্তে পবিত্র কুরআনে মালাক আল-মউত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি শব্দই "মৃত্যুর ফেরেস্তা" অর্থ প্রকাশ করে। আজরাইল শব্দটি ইজরাইল, আজরিন, ইজরায়েল, আজরাইল, আজরাইল, আজরাইল, ওজরিয়েল, আজরা-ঈল নামেও লেখা হয়। চেম্বারস ইংরেজি অভিধানে শব্দটির অর্থ "সৃষ্টিকর্তাকে সাহায্য করা" বোঝানো হয়েছে।[][]

দায়িত্ব ও প্রক্রিয়া

সম্পাদনা

কুরআনে সুরা সাজদাহের আয়াত সংখ্যা ১১-এ উল্লেখ করা হয়েছে: “বলে দাও, তোমাদের জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতারা, তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। নির্দিষ্ট কাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তোমাদের উপর? অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ফিরে যাবে।”[] উপরন্তু সুরা আনআমের ৬১ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে, “অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা এতে কোনো ত্রুটি করে না।” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে “রুসুল” শব্দ দ্বারা রুহ কবজ করার সময় হজরত আজরাইলের সঙ্গে উপস্থিত সহকারী ফেরেশতাগণকে বোঝানো হয়েছে। রুহ কবজ করার সময় মালাকুল মউত মূল দায়িত্ব পালন করলেও সঙ্গে তার একদল ফেরেশতা উপস্থিত থাকে। রুহ কবজ করার পর রুহকে রহমতের ফেরেশতা অথবা আজাবের ফেরেশতার নিকট হস্তান্তর করা হয়।[]

কুরআনে বলা হয়েছে প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ লাভ করতে হবে। মৃত্যু হলো পৃথিবীর জীবনকালের সমাপ্তি। প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর স্থান দিন-ক্ষণ সুনির্দিষ্ট। মৃত্যুর স্থান সম্বন্ধে কুরআনে সুরা নিসায় বলা হয়েছে:

أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِ اللّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلًّ مِّنْ عِندِ اللّهِ فَمَا لِهَـؤُلاء الْقَوْمِ لاَ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا

সুরা নিসা’র উর্পযুক্ত ৭৮ সংখ্যক আয়াতের অর্থ হলো: “তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই; যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুত তাদের কোনো কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কী হবে, যারা কখনও কোনো কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।”

মৃত্যুর সময় সম্বন্ধে কুরআনে সুরা আরাফে বলা হয়েছে:

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ

‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি (মৃত্যুর) মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ (মৃত্যু) এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩৪) []

মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ’র নির্দেশ অনুযায়ী আজরাইল ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হন। পৃথিবীর আমল বা কৃতকর্ম অনুযায়ী ভালো মানুষের কাছে পবিত্ররূপে আর পাপীদের কাছে ভয়ংকররূপে আবির্ভূত হন এবং মানুষের জান বা রুহ কবজ করেন। তার সঙ্গে আরও ফেরেশতারা থাকেন। []

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. কুরআন ৩১:৩৪
  2. Davidson, Gustav (1967), A Dictionary of Angels, Including The Fallen Angels, Entry: Azrael, pp. 64, 65, Library of Congress Catalog Card Number: 66-19757
  3. Shri Guru Granth Sahib, Section 07 - Raag Gauree - Part 165, "Azraa-eel, the Angel of Death, shall crush them like sesame seeds in the oil-press."
  4. "সেজদাহ আয়াত ১১ | As-Sajdah:11 | 32:11 - Quran O"qurano.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৩ 
  5. ইমাম গাজ্জালীল লেখা “তাকায়েকুল আখবার”
  6. আল্লাহর ক্ষমতা ও মৃত্যুর ফেরেশতা
  7. "নবীজি (সা.) এর বর্ণনায় ফেরেশতারা যেভাবে জান কবজ করেন"। ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা