ইরেন জোলিও-ক্যুরি
ইরেন জোলিও-ক্যুরি[টীকা ১] (ফরাসি: Irène Joliot-Curie; জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১৭ মার্চ, ১৯৫৬) ছিলেন বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী। এছাড়াও, তিনি মারিয়া স্ক্লদভ্স্কা ক্যুরি এবং পিয়ের ক্যুরি দম্পতির কন্যা ও ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি'র স্ত্রী ছিলেন। তিনি এবং তার স্বামী ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি'র সাথে যৌথভাবে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিস্কারের ফলে রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ক্যুরি দম্পতির এ সাফল্যের প্রেক্ষাপটে অদ্যাবধি সফলতম নোবেল বিজয়ী পরিবার হিসেবে আসীন রয়েছে।[১]
ইরেন জোলিও-ক্যুরি Irène Joliot-Curie | |
---|---|
জন্ম | প্যারিস, ফ্রান্স | ১২ সেপ্টেম্বর ১৮৯৭
মৃত্যু | ১৭ মার্চ ১৯৫৬ প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৫৮)
জাতীয়তা | ফরাসি, পোলীয় |
নাগরিকত্ব | ফরাসি |
মাতৃশিক্ষায়তন | সর্বন |
পুরস্কার | রসায়নে নোবেল পুরস্কার (১৯৩৫) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | পোল লঁজ্যভাঁ |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | সন্তানদ্বয় |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাফ্রান্সের প্যারিসে ইরেন ক্যুরি জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে একবছর মেয়াদী সনাতনী শিক্ষাগ্রহণের পর পিতা-মাতা তার মধ্যে অসম্ভব গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার ছাপ দেখতে পান। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা আনয়ণে আরো বেশি প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করতে হয় তাদেরকে। মারি ক্যুরি বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত ফরাসি ব্যক্তিত্বসহ পদার্থবিদ পোল লঁজ্যভাঁ -র সহায়তায় দ্য কোঅপরাটিভ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতির সূচনা করেন যা ফ্রান্সের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় ভিন্নতর ছিল। এ পদ্ধতিতে একজন অভিভাবক অন্যের সন্তানকে পড়াশোনা করানোর জন্যে বাড়িতে গিয়ে পড়াতেন। এর শিক্ষাসূচী মানসম্পন্ন ছিল এবং বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় হিসেবে নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশ ও খেলার ছলে চীনা ভাষা এবং ভাস্কর্যকলাও শেখানো হতো।[২]
এ শিক্ষাপদ্ধতি দুই বছরের জন্যে স্থায়ী হয়েছিল। এরপর ১৯১২ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তাকে পুনরায় অর্থোডক্সের পরিবেশে শেখার জন্যে প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কলেজ সেভিনেতে ভর্তি করানো হয়। অতঃপর সরবোনে বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হয়ে তিনি তার ব্যাকালরেট ডিপ্লোমা অর্জন করেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে তার পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছিল।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাডি.এসসি ডিগ্রী অর্জনের শেষদিকে ১৯২৪ সালে ব্যবহারিক পরীক্ষাগারের দিক-নির্দেশনায় তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক গবেষণায় তরুণ রাসায়নিক প্রকৌশলী ফ্রেদেরিক জোলিও'র কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ঐ সময় ফ্রেদেরিক জোলিও রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে বিখ্যাত মহিলা বিজ্ঞানী মারি ক্যুরি'র সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। একপর্যায়ে ইরেন ক্যুরি ফ্রেদেরিক জোলিওকে ভালবেসে ফেলেন। ৪ অক্টোবর, ১৯২৬ সালে প্যারিসে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উভয়েই তাদের গোত্র নাম পরিবর্তন করে জোলিও-ক্যুরি রাখেন। এ দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের এগারো মাস পর হেলেন এবং ১৯৩২ সালে পিয়ের জন্মগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে - হেলেন খ্যাতনামা পদার্থবিদ এবং পিয়ের জীববিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।[৩]
জোলিও তার জীবনের শেষদিকে অরসেতে পরমাণু পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। সেখানেই তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষালাভ করেন।
গবেষণা কর্ম
সম্পাদনা১৯২৮ সালে স্বামী-স্ত্রী একসাথে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা সম্পর্কীয় গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কর্মে পজিট্রন এবং নিউট্রনকে একত্রে দেখতে পান যা ফলাফলে আশানুরূপ হয়নি। এ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফলকে কেন্দ্র করে কার্ল ডেভিড এন্ডারসন এবং জেমস চ্যাডউইক কর্তৃক ১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিস্কৃত হয়। এ আবিস্কারগুলো ১৮৯৭ সালে জে. জে. থমসনের ইলেকট্রন আবিস্কারের পাশাপাশি আলোচিত হতে থাকে ও জন ডাল্টনের পরমাণু গঠন তত্ত্বের স্থলাভিষিক্ত হয়। ১৯৩৫ সালে জোলিও-ক্যুরি দম্পতি রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিস্কারের দরুন তাদের এ মূল্যায়ন করা হয়। এরফলে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে বোরন, ম্যাগণেসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম সহযোগে আলফা উপাদান থেকে রেডিওআইসোটোপ তৈরী করা সম্ভবপর।
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ এই ফরাসি ব্যক্তিনাম বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Nobel Laureates Facts: 'Family Nobel Laureates'". Nobel Foundation. 2008. Retrieved 2008-09-04.
- ↑ http://www.woodrow.org/teachers/ci/1992/IreneJoliot-Curie.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জুলাই ২০০৭ তারিখে Woodrow Wilson National Fellowship Foundation
- ↑ Byers, Nina; Williams, Gary A. (2006). "Hélène Langevin-Joliot and Pierre Radvanyi". Out of the Shadows: Contributions of Twentieth-Century Women to Physics. Cambridge, UK: Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-৮২১৯৭-৫.