অ্যারন সোয়ার্টজ

মার্কিন ইন্টারনেট আন্দোলনকর্মী এবং প্রোগ্রামার

অ্যারন সোয়ার্টজ মার্কিন ইন্টারনেট আন্দোলনকর্মী এবং প্রোগ্রামার। সোয়ার্টজ মাত্র ১৪ বছর বয়সে ওয়েব ফিডের আরএসএস তৈরি করে প্রযুক্তি জগতে বিস্ময় বালক হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে বিভিন্ন ওয়েব ফাইল সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে ইন্টারনেটের 'নায়ক' বনে যান। সে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সমস্ত সীমাবদ্ধতা দূর করে সবার জন্য তথ্য ও জ্ঞান সহজলভ্য করার সংগ্রামে লিপ্ত ছিল।[][]

অ্যারন সোয়ার্টজ
অ্যারন সোয়ার্টজ, একটি ক্রিয়েটিভ কমন্স অনুষ্ঠানে, ডিসেম্বর ১৩, ২০০৮ এ
জন্ম
অ্যারন এইচ. সোয়ার্টজ (Aaron H. Swartz)

(১৯৮৬-১১-০৮)৮ নভেম্বর ১৯৮৬
শিকাগো, ইলিন‌য়েস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুজানুয়ারি ১১, ২০১৩(2013-01-11) (বয়স ২৬)
ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুর কারণআত্মহত্যা
পেশাসফটওয়্যার ডেভেলপার, লেখক, ইন্টারনেট আন্দোলনকর্মী
ওয়েবসাইটaaronsw.com
 
২০০২ সালে সোয়ার্টজ (১৫ বছর বয়সে) লরেনছ লেসসিগের সাথে ক্রিয়েটিভ কমনস

মাত্র ১২ বছর বয়সে একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার দিয়ে যাত্রা শুরু। ১৩ বছর বয়সে একটি অবাণিজ্যিক ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার জন্য ‘আর্সডিজিটা প্রাইজ’ পেয়েছিল সোয়ার্টজ। ইন্টারনেটে ব্লগপোস্ট সঞ্চালনের স্বয়ংক্রিয় সংগঠিত ব্যবস্থা আরএসএস তৈরির কাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ১৪ বছর বয়সে।[] এই ১৪বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক লরেন্স লেসিগের সঙ্গে, তার ‘ক্রিয়েটিভ কমনস’ নামের ইন্টারনেট সংস্থা গড়ে তোলার কাজে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক সংবাদ সাইট ‘রেডিট’ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। রেডিট ছিল একটি যৌথ উদ্যোগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কনডি ন্যাস্ট একসময় রেডিট কিনে নিলে প্রচুর টাকা পেয়েছিলেন সোয়ার্টজ।[]

ইন্টারনেট যোদ্ধা

সম্পাদনা
 
Swartz in 2012 protesting against Stop Online Piracy Act (SOPA)
 
Swartz at 2009 Boston Wikipedia Meetup

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস তার নামের আগে লেখে ‘পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্ট’। ডেমোক্রেসিওয়াচ-খ্যাত এমি গুডম্যান তাকে বলেন ‘সোশ্যাল জাস্টিস অ্যাকটিভিস্ট’। অন্যরা ‘ফ্রি ডেটা অ্যাকটিভিস্ট’, ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম অ্যাকটিভিস্ট’, ‘ক্রুসেডার ইন ওপেন ডেটা মুভমেন্ট’ ইত্যাদি নামে তাকে অভিহিত করেছে। উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাইটার’ বলতে যাদের বোঝাতে চান, অ্যারন সোয়ার্টজ তাদের সবচেয়ে সামনের সারির একজন যোদ্ধা যারা একদিকে রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে ইন্টারনেটকে রক্ষা করার লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে অনলাইনে ফাইল শেয়ারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর কাছ থেকে জনসাধারণের জন্য বিনা পয়সায় বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল কর্ম বিতরণ করে চলেছে। তাদের মতে, তথ্য ও জ্ঞানের প্রবাহকে করতে হবে অবাধ ও সহজলভ্য।[]

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষে মানুষে যোগাযোগ স্থাপনের স্বাধীন অধিকার (ফ্রিডম টু কানেক্ট) সুরক্ষিত করতে এবং তথ্য ও জ্ঞানের অভিগম্যতাকে সর্বজনীন ও সহজলভ্য করতে অ্যারন যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আদালতের নথিপত্র বিনা মূল্যে ও সহজে প্রত্যেক নাগরিকের পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ২০০৮ সালে সে সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল এবং নামিয়ে ফেলেছিল প্রায় দুই কোটি নথিপত্র। এফবিআই তাকে জেরা করলেও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি। ২০১১ সালে অ্যারন জেস্টোর নামের অনলাইন আর্কাইভে এমআইটির কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে ডাউনলোড করে ফেলেছিল প্রায় ৪৮ লাখ বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, একাডেমিক সন্দর্ভ, বুক রিভিউ যা সে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

২৬ বছর বয়সী সোয়ার্টজকে নিউইয়র্কে তার অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিউইয়র্কের পুলিশ এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ১১ জানুয়ারি সোয়ার্টজের মৃতদেহ পাওয়া গেছে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায়। পরিবার ও বন্ধু-সুহূদরা অভিযোগ করছে, এই মৃত্যু আসলে একটা হত্যাকাণ্ড।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অ্যারন সোয়ার্টজকে খুন করল কে? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-১০-০৭ তারিখে,মশিউল আলম, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২২-০১-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  2. প্রোগ্রামার সোয়ার্টজ আত্মহত্যা করেছেন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০১-১৭ তারিখে,আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ইউকেবিডি নিউজ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৪-০১-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা