অনাক্রম্যতন্ত্রে অ্যান্টিজেন (Ag) বলতে একটি আণবিক কাঠামো বোঝায় যা জীবাণু বা বহিরাগত কোন প্যাথোজেনের পৃষ্ঠে থাকতে পারে এবং যা অ্যান্টিবডি বা টি-সেল অ্যান্টিজেন রিসেপ্টারের দ্বারা আবদ্ধ হয়।[] দেহে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।[] Ag এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো অ্যান্টিবডি জেনারেটর[]

চিত্রে অ্যান্টিজেনের সাথে মিলিত হয়ে অ্যান্টিবডির স্ব অনাক্রমণতা দেখানো হয়েছে

অ্যান্টিজেনগুলো হচ্ছে প্রোটিন, পেপটাইডস (অ্যামিনো অ্যাসিড চেইন) এবং পলিস্যাকারাইডস (মনোস্যাকারাইডস / সিম্পল সুগারগুলির চেইন)। লিপিড এবং নিউক্লিক অ্যাসিডগুলো কেবলমাত্র প্রোটিন এবং পলিস্যাকারাইডের সাথে মিলিত হয়ে অ্যান্টিজেন গঠন করে।[]

ভ্যাকসিনগুলো অ্যান্টিজেনের ইমিউনোজেনিক ফর্মের উদাহরণ। ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির দেহে প্যাথোজেনের অ্যান্টিজেনের প্রতি অনাক্রমতা সৃষ্টি এবং মেমোরি ফাংশনের সূত্রপাত ঘটানো। উদাহরণস্বরুপ মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিনের কথা বলা যায়।[]

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পাউল এরলিখ তার পার্শ্ব-শৃঙ্খল তত্ত্বে প্রতিবস্তু বা প্রতিরক্ষিকার জার্মান প্রতিশব্দ আন্টিকোরপারে শব্দটি ব্যবহার করেন।[] ১৮৯৯ সালে লাডিলাস ডয়েচ (লাসজলো ডেট্রে) (১৮৭৪-১৯৩৯) ব্যাকটেরিয়া উপাদান এবং অ্যান্টিবডির মধ্যে কাল্পনিক পদার্থের নামকরণ করেন "অ্যান্টিজেনিক বা ইমিউনোজেনিক পদার্থ"। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই পদার্থগুলো অ্যান্টিবডির পূর্বসূরি। যেমন জাইমোজেন একটি এনজাইমের পূর্বসূরি। কিন্তু, ১৯০৩ সালে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এন্টিজেন আসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (এন্টিবডি) উৎপাদনে প্ররোচিত করে। এন্টিজেন শব্দটি এন্টিসোমাটোজেন শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ।অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুসারে অ্যান্টিজেন শব্দটির যৌক্তিক উচ্চারণ হওয়া উচিত "anti(body)-gen"[][]

পরিভাষা

সম্পাদনা
  • উপাঞ্চল (এপিটোপ) - অ্যান্টিজেনের পৃষ্ঠের অনন্য বৈশিষ্ট্য, এটি অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিজেনিক নির্ধারক
  • এলার্জেন - একটি পদার্থ যা এলার্জিপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম । এ প্রতিক্রিয়া ইনজেকশন নেওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে হতে পারে।
  • অতি-প্রত্যুৎপাদক (সুপার-অ্যান্টিজেন) - এক শ্রেণীর এন্টিজেন যা T-কোষের অনির্দিষ্ট সক্রিয়করণ ঘটায়। যার ফলে পলিক্লোনাল টি-সেল সক্রিয় হয় এবং সাইটোকাইন মুক্তি হয়।
  • টলেরোজেন - একটি পদার্থ যা তার আণবিক গঠনের কারণে একটি নির্দিষ্ট অনাক্রমণতায় অ-প্রতিক্রিয়াশীলতা সৃষ্টি করে। এর আণবিক রূপ পরিবর্তিত হলে, এটি ইমিউনোজেনে পরিনত হয়।
  • ইমিউনোগ্লোবুলিন-বাইন্ডিং প্রোটিন - প্রোটিন যেমন প্রোটিন এ, প্রোটিন জি, এবং প্রোটিন এল যা অ্যান্টিজেন-বাইন্ডিং সাইটের বাইরে অবস্থান নেয় এবং অ্যান্টিবডিকে অ্যান্টিজেনের সাথে বন্ধন গঠনে সাহায্য করে।
  • টি-নির্ভর অ্যান্টিজেন – অ্যান্টিজেন, যা নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি গঠনে প্ররোচিত করতে T কোষকে সাহায্য করে।
  • অ-নির্ভরশীল টি অ্যান্টিজেন – অ্যান্টিজেন, যা সরাসরি B কোষকে উদ্দীপিত করে।
  • ইমিউনপ্রভাবশালী এন্টিজেন - অ্যান্টিজেন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপাদন করার ক্ষমতার (একটি জীবাণু থেকে অন্যদের উপর) উপর আধিপত্য বিস্তার করে।[]

শ্রেণিবিভাগ

সম্পাদনা

প্রত্যুৎপাদকগুলিকে তাদের উৎস অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।

প্রত্যুৎপাদকীয় সুনির্দিষ্টতা

সম্পাদনা

প্রত্যুৎপাদকীয় সুনির্দিষ্টতা বলতে কোষ কর্তৃক কোনও প্রত্যুৎপাদককে বিশেষ একটি অনন্য আণবিক সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং প্রত্যুৎপাদককে কোষ থেকে যথাযথ নির্ভুলতার সাথে আলাদা করার ক্ষমতাকে বুঝায়। প্রত্যুৎপাদকের সুনির্দিষ্টতা মূলত প্রত্যুৎপাদকের পার্শ্ব-শৃঙ্খল গঠনের কারণে ঘটে। এটি সাধারণত পরিমাপযোগ্য।[][] টি কোষ এবং বি কোষ উভয়ই অর্জিত প্রতিরক্ষার কোষীয় উপাদান।[১০]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Antibody"। National Human Genome Research Institute, US National Institutes of Health। ২০২০। ৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২০ 
  2. "Immune system and disorders"। MedlinePlus, US National Institute of Medicine। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০। ১৪ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২০ 
  3. Male, David K. (২০০৬)। Immunology (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-0323033992। ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২১ 
  4. Gavin, AL; Hoebe, K (২২ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Adjuvant-enhanced antibody responses in the absence of toll-like receptor signaling": 1936–38। ডিওআই:10.1126/science.1135299পিএমআইডি 17185603পিএমসি 1868398  
  5. "Antigenic characterization"। US Centers for Disease Control and Prevention। ১৫ অক্টোবর ২০১৯। ৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২০ 
  6. Strebhardt, Klaus; Ullrich, Axel (জুন ২০০৮)। "Paul Ehrlich's magic bullet concept: 100 years of progress"। Nature Reviews Cancer8 (6): 473–80। আইএসএসএন 1474-1768এসটুসিআইডি 30063909ডিওআই:10.1038/nrc2394পিএমআইডি 18469827 
  7. Lindenmann, Jean (১৯৮৪)। "Origin of the Terms 'Antibody' and 'Antigen'"Scand. J. Immunol.19 (4): 281–85। ডিওআই:10.1111/j.1365-3083.1984.tb00931.xপিএমআইডি 6374880। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-৩১ [অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Antigen - New World Encyclopedia"www.newworldencyclopedia.org। ১৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২১ 
  9. Doolan DL, Southwood S, Freilich DA, Sidney J, Graber NL, Shatney L, Bebris L, Florens L, Dobano C, Witney AA, Appella E, Hoffman SL, Yates JR, Carucci DJ, Sette A (আগস্ট ২০০৩)। "Identification of Plasmodium falciparum antigens by antigenic analysis of genomic and proteomic data"Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America100 (17): 9952–57। ডিওআই:10.1073/pnas.1633254100পিএমআইডি 12886016পিএমসি 187898 বিবকোড:2003PNAS..100.9952D 
  10. K. Abbas, Abul; Lichtman, Andrew (২০১৮)। Cellular and molecular immunology (Ninth সংস্করণ)। Elsevier। পৃষ্ঠা 97। আইএসবিএন 978-0-323-52324-0