অ্যাডলফ স্যাক্স
আয়ান্টনি-জোসেফ "অ্যাডলফ" স্যাক্স (৬ই নভেম্বর, ১৮১৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)[১] ছিলেন একজন বেলজিয়ান আবিষ্কারক ও সুরকার। তিনি স্যাক্সোফোন আবিষ্কার করেন।তিনি বাঁশি এবং সানাই বাজাতেন। তার অন্যান্য সৃষ্টিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যাক্সোট্রোম্বা, স্যাক্সহর্ন এবং স্যাক্সটুবা. ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর গুগল গুগোল ডুডোলের মাধ্যমে তার ২০১তম জন্মদিন পালন করে।[২]
অ্যাডলফ স্যাক্স | |
---|---|
জন্ম | আয়ান্টনি-জোসেফ স্যাক্স ৬ নভেম্বর ১৮১৪ |
মৃত্যু | আনু. ৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪ | (বয়স ৭৯)
জাতীয়তা | বেলজিয়ান |
পেশা | আবিষ্কারক, সুরকার, বাদ্যযন্ত্রের ডিজাইনার |
পরিচিতির কারণ | স্যাক্সোফোনেরআবিষ্কারক |
শৈশব ও কৈশোর
সম্পাদনা১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে ৬ নভেম্বর বেলজিয়ামের দিনান্তেতে আয়ান্টনি-জোসেফ স্যাক্স জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা- মাতা ছিলেন মি. ও মিসেস চার্লস জোসেফ স্যাক্স।. তার নামের প্রথম অংশ আয়ান্টনি হলেও তিনি শৈশব থেকেই অ্যাডলফ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।[৩][৪] তার মা-বাবাও নিজেদের যন্ত্রের ডিজাইন করতেন। তারা (স্যাক্সের মা-বাবা) ফ্রেন্সহর্ণের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। অ্যাডলফ ছোটবেলা থেকেই তার নিজের যন্ত্র তৈরি করা শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একটি প্রতিযোগিতার জন্যে তিনি দুটি বাঁশি ও একটি সানাই তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ব্রাসেলস রয়েল সঙ্গীতবিদ্যালয়ে কণ্ঠ চর্চার পাশাপাশি ঐ যন্ত্র দু'টিরও চর্চা করেন।[৩][৪]
সিটি অব দিনান্ত-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘’’অ্যাডলফ স্যাক্স’’’-এর জীবনী থেকে জানা যায় যে, স্যাক্স অনেক কাছাঁকাছি মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রথমত, যখন তিনি মাত্র দাঁড়ানো শিখেছেন তখন তিন তলার সমপরিমাণ উঁচু থেকে পড়ে পাথরের সঙ্গে লেগে মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলেন। তাঁকে মৃত ধারণা করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তিন বছর বয়সে তিনি গণ্ধক মিশ্রিত এক বাটি পানি পান করেছিলেন। তৃতীয়ত, বারুদ বিস্ফোরণের সাহায্যে নিজেকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। চতুর্থত, তিনি গরম ঢালাই লোহার কড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন, এর ফলে তাঁর এক পাশ পুড়ে যায়। পঞ্চমত, বেডরুমে রাখা দাহ্য পদার্থ থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া এবং বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। ষষ্ঠত, তিনি তাঁর মাথায় খোয়া দ্বারা আঘাত করেছিলেন। সর্বশেষ, তিনি নদীতে পড়েছিলেন। সংক্ষেপে বলা যায়, স্যাক্সের শৈশব ছিল ট্রাজেডিপূর্ণ। ঐ জীবনী অনুসারে আরও জানা যায়, তাঁর মা একবার বলেছিলেন, “সে একটা দুর্ভাগা শিশু; যে কিনা বাঁচতে চায় না”। তার প্রতিবেশিরা তাকে “ছোট ভূত” বলে ডাকত। [৫][৬]
কর্মজীবন
সম্পাদনাযখন স্যাক্সের মা-বাবা প্রচলিত যন্ত্র তৈরি করে সংসারের জন্য উপার্জনের ব্যবস্থা করছিলেন তখন তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করে নতুন যন্ত্রের নকশা শুরু করেন। অ্যাডলফের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল একটি খাদের সুরের সানাইয়ের নকশা প্রণয়ন। তিনি এটি করেছিলেন ২৪ বছর বয়সে। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে স্যাক্স স্থায়ীভাবে প্যারিসে স্থানান্তর হয়েছিলেন। এবং ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে তিনি নতুন যন্ত্রের সেটগুলোর বিকাশের কাজ শুরু করেন। তন্মমধ্যে ভেঁপুতে ভাল্ব লাগানো উল্লেখযোগ্য, যদিও এর থেকেও আরও সফল আবিষ্কার তার আছে। তার সর্বাধিক সফল আবিষ্কার হচ্ছে পিতলের বাঁশি, যেগুলো স্যাক্সহর্ণ নামে পরিচিতি লাভ করে। এগুলো প্রায় ৭টি ভিন্ন ভিন্ন সাইজের ছিল। এটি ফ্লুগেলহর্ণ আবিষ্কারের পথকে প্রশস্ত করে দেয়। এখনও কিছু কিছু সময় বিভিন্ন কনসার্ট ব্যান্ড এবং অর্কেস্ট্রায় স্যাক্সহর্ণ ব্যবহার করা হয়। এই স্যাক্সহর্ণই মূলত আধুনিক বাঁশি সদৃশ বাদ্যযন্ত্রসমূহের ভিত্তি।
১৮৪৫ সালে স্যাক্স স্যাক্সহর্ণের থেকেও নিচু স্বর সৃষ্টিকারী ভাল্ব সমৃদ্ধ স্যাক্সট্রম্বা জাতীয় যন্ত্রগুলোর উন্নয়ন সাধন করেন, যদিও সেগুলো এখন কদাচিৎ বিদ্যমান।[৩]
স্যাক্সহর্ণ যন্ত্রগুলি দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। স্যাক্সহর্ণ ভাল্বগুলো শিল্পের রাজ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল এবং অদ্যাবধি অপরিবর্তিত রয়েছে গেছে। খুব দ্রুতই অ্যাডলফের এই আবিষ্কারকে ব্রিটিশ বাঁশি নির্মাতারা অণুসরণ করতে থাকে। স্যাক্সহর্ণ একচেটিয়াভাবে বাজার দখল করে। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে জেডফরেস্ট ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যান্ড এবং ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে হাউইক স্যাক্সহর্ণ ব্যান্ড গঠিত হলে এক দশক পরে স্কটিশ অঞ্চলে স্যাক্সহর্ণ মডেল সহজলভ্য হয়।
যে যন্ত্রটির জন্য স্যাক্স সর্বাধিক পরিচিত সেই স্যাক্সোফোনের নকশা তিনি প্রণয়ন করেন ২৮ জুন, ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দ। স্যাক্সোফোন আবিষ্কার করা হয়েছিল অর্ক্সট্রা এবং কনসার্টে ব্যবহার করার জন্য। ১৮৪২ সালে গীতিকার হেক্টর বার্লিওজ এই নতুন যন্ত্রের প্রশংসা করেছিলেন। স্যাক্স ১৮৪৬ সালে মধ্যে স্যাক্সোফোনের সম্পূর্ণ নকশা কাগজের উপর অঙ্কন করেছিলেন। যদিও স্যক্সোফোন কখনো অর্কেস্ট্রার জন্য আদর্শ যন্ত্র হয়নি, তবুও এটি তার ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল। এবং এটিই তাকে ১৮৫৭ সালে প্যারিস সঙ্গীত বিদ্যালয়ে চাকরি পেতে সহায়তা করে।
স্যাক্স পরবর্তী জীবনে যন্ত্র তৈরি করে চলেছেন এবং প্যারিস সঙ্গীত বিদ্যালয়ে নতুন স্যাক্সোফোন বর্গের সভাপতিত্ব করেন। প্রতিদ্বন্দ্ব্বী উপকরণ নির্মাতারা স্যাক্স এবং তার কোম্পানির বিরুদ্ধে বৈধতার মামলা করে। তাকে দীর্ঘ সময় মামলা-মোকদ্দমায় ভুগতে হয়। ১৮৫৬ সালে এবং পুনরায় ১৮৭৩ সালে তিনি দেউলিয়া হন।
১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ পর্যন্ত স্যাক্স ঠোঁট ক্যান্সারে ভুগেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করেন। তিনি ১৮৯৪ প্যারিসে মারা যান। প্যারিসের মন্টমার্ট্র সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
আবিষ্কৃত অন্যান্য যন্ত্রসমূহ
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনা- Adolphe Sax, Malou Haine, Ed. Bruxelles University, 1980
- Sax, Mule & Co, Jean-Pierre Thiollet, Paris, H & D, 2004. আইএসবিএন ২-৯১৪২৬৬-০৩-০
- Adolphe Sax 1814–1894 — His Life and Legacy, Wally Horwood, Ed. Egon Publishers Ltd. আইএসবিএন ০ ৯০৫৮৫৮ ১৮ ২
- The Cambridge Companion to the Saxophone, Richard Ingham Ed. Cambridge University Press 1998.
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অনেক জায়গায় স্যাক্সের ভিন্ন মৃত্যু তারিখ দেওয়া আছে, তবে প্রধানত ৩ এবং ৭ ফেব্রুয়ারি, যেমন- তাঁর সমাধির একটি ফলকে ৭ ফেব্রুয়ারি লেখা আছে। তবে,Biographical Dictionary of Musicians (অষ্টম সংস্করণ, Slonimsky) এবংGrove Dictionary of Music and Musicians এর প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় সংস্করণে ৪ ফেব্রুয়ারি লেখা আছে।
- ↑ https://www.google.com/doodles/adolphe-saxs-201st-birthday Google.Com
- ↑ ক খ গ Hubbard, W. L. (১৯১০)। The American History and Encyclopedia of Music। Toledo, Ohio: Squire Cooley। পৃষ্ঠা 454। আইএসবিএন 1-4179-0200-0। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০০৭।
- ↑ ক খ Richard Ingham (১৯৯৮)। The Cambridge companion to the saxophone। Cambridge Companions to Music। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1–2। আইএসবিএন 978-0-521-59666-4।
- ↑ Cleary, Tom. "Adolphe Sax: 5 Fast Facts You Need to Know", Heavy.com, Retrieved 06 November 2015
- ↑ Rémy, Albert. "Adolphe Sax". Ville de Dinant website, Retrieved 06 November 2015.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Pictures of four Sax Saxophones (circa 1858–76) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে
- চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Sax, Antoine Joseph"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।