অষ্টকম
অষ্টকম শব্দটি [(সংস্কৃত: अष्टकम्), প্রায়শই অস্তকম লেখা হয়], একটি সংস্কৃত শব্দঅষ্টা থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "আট"। কাব্যিক রচনার প্রেক্ষাপটে 'অষ্টকম' শব্দটি আটটি স্তবক নিয়ে গঠিত এমন কবিতা নির্দেশ করে।
গঠন
সম্পাদনা"অষ্টকম" এর প্রতিটি স্তবক চারটি পংক্তি বা চতুর্পদী নিয়ে গঠিত এবং লাইনগুলির ছন্দ সাধারণত a-a-a-a। অর্থাৎ, একটি অষ্টকমে সাধারণত মোট বত্রিশটি লাইন থাকে। এগুলি কঠোর ছন্দবদ্ধ কাঠামো অনুসরণ করে। একটি অষ্টকমের আদর্শ ছন্দ গঠন হলো: a-a-a-a/b-b-b-b…. ("/" নতুন স্তবক নির্দেশ করে)। এখানে ছন্দপ্রকৃতি ear-rhyme এবং eye-rhyme উভয় ধরনের হতে পারে। Ear-rhyme হল যেখানে শব্দের শেষাংশ শ্রুতিগতভাবে একই রকম শোনায়, এবং eye-rhyme হল যেখানে শেষের অক্ষরগুলির চেহারা একই রকম। এই ছন্দ বিন্যাস অষ্টকমের সাধারণ কাঠামো গঠন করে। অষ্টকম ছন্দ গঠনে একই (কঠোর ছন্দ) বা অনুরূপ (নরম ছন্দ) শব্দগুলিকে পূর্বনির্ধারিত অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং সাধারণত লাইনগুলির শেষে বাহ্যিক ছন্দ হিসেবে বা লাইনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ছন্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সংস্কৃত ভাষা ছন্দের কাঠামো ধরে রাখতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাই সংস্কৃত অষ্টকমগুলি দীর্ঘ কবিতার মধ্যেও সীমিত সংখ্যক ছন্দ নিয়ে গঠিত হতে পারে।
অষ্টকমে অনেক সময় চতুর্পদী (চার লাইনের সেট) হঠাৎ শেষ হয়ে যেতে পারে বা কখনও কখনও দম্পদী (দুই লাইনের জোড়া) দিয়ে শেষ হয়। মূল চতুর্পদীগুলিতে কবি একটি বিষয় উপস্থাপন করেন এবং সেটি শেষের লাইনগুলিতে (দম্পদীতে) সমাধান করতে পারেন, অথবা অসামাপ্ত রেখে দিতে পারেন। কখনও কখনও শেষের দম্পদীতে কবি নিজের পরিচয় উল্লেখ করেন। এছাড়াও, অষ্টকম কাঠামো ছন্দোবদ্ধতার নিয়ম দ্বারা বাঁধা থাকার ফলে শ্রবণ এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের জন্য উপযোগী। তবে কিছু অষ্টকম রয়েছে, যেগুলি নিয়মিত কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ইতিহাস
সম্পাদনাঅষ্টকমের সাথে যুক্ত নিয়মাবলি প্রায় ২৫০০ বছর ধরে সাহিত্যিক ইতিহাসে বিকশিত হয়েছে। অন্যতম শ্রেষ্ঠ অষ্টকম রচয়িতা ছিলেন আদি শংকরাচার্য, যিনি বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশ্যে একটি অষ্টকম চক্র রচনা করেন। এই অষ্টকমগুলি একটি সংকলন হিসেবে এবং একটি একক কবিতা হিসেবে উভয়ভাবেই পড়া যায়। তিনি ত্রিশটিরও বেশি অষ্টকম বিভিন্ন দেবতার প্রতি স্তুতিতে রচনা করেন।
অষ্টকমগুলি সংস্কৃত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ এবং বৈদিক ভারতীয় সাহিত্যের সময়ে ভক্তিমূলক এবং সাধারণ কবিতার একটি বহুল প্রচলিত এবং সর্বজনীনভাবে গৃহীত ধারায় পরিণত হয়েছিল।