অর্থনীতিবাদ (ইংরেজি: Economism) হচ্ছে শ্রমিক আন্দোলনের এক ধরনের প্রবণতার নাম। অর্থাৎ শ্রমিক আন্দোলনে রাজনৈতিক সংগ্রাম ত্যাগ করে আংশিক আর্থিক দাবী আদায়ের যে প্রবণতা তাকে অর্থনীতিবাদ বলে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় যে নভেম্বর বিপ্লব সংঘটিত হয় তার মধ্যে একটি অন্যতম বিতর্কিত ধারা ছিল অর্থনীতিবাদ। তখনকার সময় নরমপন্থীদের অনেককেই অর্থনীতিবাদী বলে অভিযুক্ত করা হতো। লেনিনের অনুসারী বলশেভিকরা নরমপন্থীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছিলেন। তাদের মতে অর্থনীতিবাদের অনুসারীগণকে সমাজতান্ত্রিক বলা চলে না। কেননা, সমাজতন্ত্রের আন্দোলন কেবলমাত্র শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন নয়। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের নেতৃত্বে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বলশেভিক সমাজতন্ত্রীরা মনে করত কেবল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। রাশিয়ার বলশেভিক সংগঠনের মধ্যে অনেকেই অর্থনীতিবাদী ছিল। কারা অর্থনীতিবাদী এবং তাদের উপস্থিতি কীভাবে আন্দোলনের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে সে বিষয়ে লেনিন একটি বই লিখেছিলেন যার নাম কী করতে হবে?। বর্তমানকালে যেহেতু শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করেছে সেহেতু অর্থনীতিবাদ শব্দটিরও ব্যাপক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়, যদিও এদের অধিকাংশই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে তাই অর্থনীতিবাদ ধারাটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে।[] রাশিয়ায় অর্থনীতিবাদ ছিলো আন্তর্জাতিক সুবিধাবাদের রুশ প্রকারভেদস্বরূপ। অর্থনীতিবাদীরা এই ভ্রান্ত মতবাদ পোষণ করতেন যে সমাজতান্ত্রিক চেতনা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বয়ং শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য থেকেই বৃদ্ধি পায় এবং তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সরদার ফজলুল করিম, দর্শনকোষ, প্যাপিরাস, ঢাকা, জুলাই, ২০০৬, পৃষ্ঠা-১৪৩।
  2. ভ্লাদিমির লেনিন, কী করতে হবে?, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৮৪, পৃষ্ঠা-৭।