অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা

অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৬ – ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৭) ছিলেন একজন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মগুরু এবং ইসকন বা হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের[] প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য।[] তিনি নিজে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর শিষ্য ছিলেন। হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল তার জীবনের উদ্দেশ্য।[]

অভয়রণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
উপাধিইসকন-এর প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
অভয়চরণ দে

(১৮৯৬-০৯-০১)১ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬
মৃত্যু১৪ নভেম্বর ১৯৭৭(1977-11-14) (বয়স ৮১)
সমাধিস্থলশ্রীল প্রভুপাদের পুষ্পসমাধি, বৃন্দাবন
২৭°৩৪′১৯″ উত্তর ৭৭°৪০′৩৮″ পূর্ব / ২৭.৫৭১৯৬° উত্তর ৭৭.৬৭৭২৯° পূর্ব / 27.57196; 77.67729
ধর্মহিন্দুধর্ম
জাতীয়তাভারতীয়
আখ্যাবৈষ্ণব সম্প্রদায়
সম্প্রদায়গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম
উল্লেখযোগ্য কাজশ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ, ভাগবত পুরাণচৈতন্যচরিতামৃত অনুবাদ
যেখানের শিক্ষার্থীস্কটিশ চার্চ কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
অন্য নামএসি ভক্তিবেদান্ত, অভয়চরণারবিন্দ
সন্ন্যাস নামঅভয়রণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী
দর্শনভক্তিযোগ
ধর্মীয় জীবন
ভিত্তিকবৃন্দাবন, ভারত
কাজের মেয়াদ১৯৬৬–১৯৭৭
পূর্বসূরীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর
দীক্ষাদীক্ষা–১৯৩২, সন্ন্যাস–১৯৫৯
পদগুরু, সন্ন্যাসী, আচার্য
ওয়েবসাইটইসকনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

তিনি কলকাতায় সুবর্ণবণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল অভয়চরণ দে।[][] তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র ছিলেন।[] তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার সন্তানাদিও ছিল।[][] ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর বৈষ্ণব শাস্ত্রের ভাষ্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।[] এরপর ১৯৬০-এর দশকে পরিব্রাজক সন্ন্যাসী হিসাবে আমেরিকায় যাত্রা করে তিনি তার আধ্যাত্মিক মতাদর্শ প্রচার করতে থাকেন। ১৯৬৬ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমীর পরের দিন তিনি পাশ্চাত্যে প্রথম দীক্ষা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন ও ১১ জনকে দীক্ষা দেন। ১৯৬৭ সালের ৯ জুলাই সানফ্রান্সিসকো শহরের রাজপথে তিনিই পাশ্চাত্যে প্রথম রথযাত্রা পরিচালনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও অন্যান্য জায়গায় ভ্রমণ করে তিনি অসংখ্য শিষ্যসংগ্রহে সফল হন। ১৯৭৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

অভয়চরণ ১৮৯৬ সালের ১ সেপ্টেবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন; সে দিন ছিল জন্মাষ্টমী, যা বৈষ্ণব সমাজে অন্যতম বিশেষ দিন। পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করে তিনি ছিলেন নির্ভীক। তার পিতা গৌর মোহন দে এবং মাতা শ্রীমতি রজনী দে উভয় ছিলেন কৃষ্ণ ভক্ত। বাঙালি মা দের মত রজনী দেবী প্রসবকালে তার পিতার বাড়িতে ছিলেন, এবং মাত্র কিছু দিন পর অভয় তার পিতার বাড়িতে যান। তার পিতার বাড়ি ছিল কলকাতার ১৫১ হারিসন রোড। সেখানে তিনি বড় হন এবং শিক্ষালাভ করেন।[]

তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে লেখাপড়া করেন। তৎকালীন সময় তা ছিল সুখ্যাতি সম্পন্ন। সেখানে বহু ভক্ত পরিবারের সন্তানরা অধ্যয়ন করত। কলেজটি উত্তর কলকাতায় ছিল যা অভয়ের বাড়ির থেকে বেশি দূরে ছিল না। সেই সময় তিনি ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি সংস্কৃত ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন করেন।

১৯৫০ সালে বানপ্রস্থ অবলম্বনের পূর্বে তিনি ছিলেন এক ছোটো ফার্মাকিউটিক্যাল ব্যবসার মালিক। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার সন্তানাদিও ছিল।[][] ১৯৫৯ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এরপর বৈষ্ণব শাস্ত্রের ভাষ্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।[]

 
ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর

আধ্যাত্মিক জীবন

সম্পাদনা

জীবনের পরবর্তী পর্বে তিনি পরিব্রাজক বৈষ্ণব সন্ন্যাসী হয়ে ওঠেন। গৌর বাণী প্রচারে তিনি জলদূত জাহাজে করে আমেরিকা যাত্রা করেন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইসকন। এছাড়া ১৯৬৯ সালের ১৪ ডিসেম্বরে তিনি শ্রী শ্রী রাধা-লন্ডনেশ্বর শ্রী-বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থায় নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তিনি ভারতে এবং বিশেষ করে পাশ্চাত্যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করেন।[][১০] ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি "হয়ে ওঠেন পাশ্চাত্য বিকল্প সংস্কৃতির এক অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। সহস্রাধিক আমেরিকান যুবক যুবতীকে তিনি বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত করেন"।[১১] অ্যান্টি-কাল্ট গোষ্ঠীগুলি তাকে আক্রমণ করলেও, জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স প্রমুখ ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ তাকে স্বাগত জানান, তার অনুবাদমূলক রচনাগুলির প্রশংসা করেন এবং প্রচারমাধ্যমের অপপ্রচারের হাত থেকে তার গোষ্ঠীকে রক্ষা করেন।[১২] তার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অন্যান্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়গুলিও তাকে সম্মান জানান।[১৩]

 
১৯৭৭ সালে তিনি যে বিশ্বব্যাপী ১০৮টি মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন তার একটি, ভারতের বৃন্দাবনে কৃষ্ণ-বলরামকে (উপরে চিত্রিত) উৎসর্গ করা হয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত ও অন্যত্র তিনি শিষ্যসংগ্রহে সফল হন। এই কারণে সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবার তাকে "ক্যারিশম্যাটিক নেতা" বলে উল্লেখ করেন।[১৪][১৫][১৬]

সাংস্কৃতিক আদর্শ

সম্পাদনা
 
প্রভুপদ ১৯৭৪ সালের জুনে ফ্রাঙ্কফুর্টে কার্লফ্রেড গ্রাফ ডার্কহাইমের সাথে একটি সকালের পদচারণে।

তার প্রতিষ্ঠিত ইসকনের মূল ভিত্তি ছিল হিন্দু বৈষ্ণব বাদের একটি বিশেষ রূপ। ভাগবত পুরাণ এই সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ। ১৯৭৭ সালে প্রভুপাদের মৃত্যুর পরও ইসকনের প্রসার অব্যাহত থাকে এবং এই সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করে।[১৭][১৮]

নব্য-বৈদান্তিক আপেক্ষিকতাবাদী দার্শনিকেরা প্রভুপাদের অবৈষ্ণব বিশেষিত মায়াবাদী মতবাদগুলি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যের সমালোচনা করে থাকেন।[১৯] এটি মূলত নব্য-বৈদান্তিক মতবাদের ভক্তিবাদ-বিরোধী আদর্শ ও রক্ষণশীল বৈদান্তিক ব্যবস্থার সঙ্গে বৈষ্ণবদের বিরোধের ফলশ্রুতি।[১৯]

গ্রন্থতালিকা

সম্পাদনা

অনুবাদের সাথে ব্যাখ্যান

সম্পাদনা
 
প্রভুপাদের স্বর্ণ মন্দির

তার অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ

সম্পাদনা
  • Search for Liberation (1969)
  • Easy Journey to Other Planets (1970)
  • Krishņa Consciousness: The Topmost Yoga System (1970)
  • Beyond Birth and Death (1972)
  • The Perfection of Yoga (1972)
  • On The Way to Krishņa (1973)
  • Rāja-vidyā: The King of Knowledge (1973)
  • Elevation to Krishņa Consciousness (1973)
  • Krishņa Consciousness: The Matchless Gift (1974)
  • Perfect Questions, Perfect Answers (1977)
  • Teachings of Lord Kapila, the Son of Devahūtī (1977)
  • The Science of Self-Realization (1977)
  • Back to Godhead magazine (founder)[২০]

বাংলায় রচিত গ্রন্থ সমূহ

সম্পাদনা
 
বৃন্দাবন এ প্রভুপাদের সমাধি
  • গীতার গান
  • বৈরাগ্য বিদ্যা
  • বুদ্ধি যোগ
  • ভক্তি রত্নাবলি [২০]

মৃত্যুর পরে প্রকাশিত

সম্পাদনা
  • Light of the Bhāgavata (1978)
  • Teachings of Queen Kuntī (1978)
  • Life Comes From Life (1978)
  • Krishņa, The Reservoir of Pleasure (1972)
  • Chant and Be Happy (1982)
  • Coming Back (1983?)
  • Path of Perfection (1989)
  • Nārada bhakti sūtra (1991)
  • Mukunda-mālā-stotra (1989)
  • A Second Chance (1991)
  • Journey of Self Discovery (1991)
  • Laws of Nature: An Infallible Justice (1991)
  • Renunciation Through Wisdom (1992)
  • Quest for Enlightenment (1993)
  • The Path of Yoga (1995)
  • Message of Godhead (1996?)
  • Civilization and Transcendence (1998)
  • Dharma: The Way of Transcendence (1998)
  • Introduction to Bhagavad-gītā (2005)[২০]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটিকা

সম্পাদনা
  1. Melton, John Gordon। "Hare Krishna - Encyclopedia Britannica"। www.britannica.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০১ 
  2. Goswami et al. 1983, পৃ. 986
  3. Klostermaier 2007, পৃ. 217
  4. Goswami 2002, Vol.1 Chapter 1
  5. "Interview with Srila Prabhupada's Grand-Nephew - Sankarsan Prabhu"bvmlu.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৫ 
  6. Goswami 2002, Vol.1 Chapter 2
  7. Rhodes 2001, পৃ. 178
  8. Goswami 2002, Vol.1 Chapter 4
  9. Goswami 2002, Vol.1 Chapter 9
  10. Ekstrand ও Bryant 2004, পৃ. 23
  11. Klostermaier 2007, পৃ. 309
  12. Vasan ও Lewis 2005, পৃ. 129
  13. Paramadvaiti, Swami B. A.। "Branches of the Gaudiya Math"। www.vrindavan.org। ২০০৮-০৭-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-৩০ Bhaktivedanta Swami Maharaja surprised the entire world as well as his godbrothers with his outstanding achievements. He single handedly fulfilled the prediction of Sri Chaitanya Mahaprabhu: "The Holy Names of Krishna will be sung in every town and village in the world."
  14. "Unrecognized charisma? A study and comparison of four charismatic leaders: Charles Taze Russell, Joseph Smith, L Ron Hubbard, Swami Prabhupada" by George D. Chryssides. Paper presented at the 2001 International Conference The Spiritual Supermarket: Religious Pluralism in the 21st Century, organised by INFORM and CESNUR (London, April 2001)
  15. "in an evaluation of the nature of the guru, Larry Shinn, a scholar of religions, utilised Max Weber's analysis of charisma in order to understand Prabhupada and the issue of leadership in ISKCON..."status as charismatic leader" Knot 1997, Chapter: Prabhupada and role of guru
  16. Shinn 1987, পৃ. 49
  17. Smith, David Nichol (২০০৩)। Hinduism and modernity। Cambridge, MA: Blackwell Pub। পৃষ্ঠা 178আইএসবিএন 0-631-20862-3 
  18. Cole ও Dwayer 2007, পৃ. 64
  19. Surya, Gerald। "Book Review A Critique of A. C. Bhaktivedanta"। ICJ, Vol 7, No 2 December 1999। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-৩১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  20. Cole ও Dwayer 2007, পৃ. 34

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা