অঞ্জনা মিশ্র ধর্ষণ মামলা
অঞ্জনা মিশ্র ধর্ষণ মামলাটি একটি বহুলালোচিত ধর্ষণের ঘটনা যা ১৯৯৯ সালের জানুয়ারীতে ভারতের ওড়িশায় সংঘটিত হয়েছিল। অঞ্জনা মিশ্র, যার বয়স তখন ৩২, একজন ভারতীয় বন পরিষেবা কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন। বিষয়টি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন অঞ্জনা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জে. বি. পাটনায়েক এবং তার বন্ধু প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল ইন্দ্রজিৎ রায়কে অভিযুক্ত করেন যে তারাও এই বিষয়ে জড়িত।[১] জনতার উত্তাল বিক্ষোভের মুখে জে বি পাটনায়েকমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ত্যাগ করতে বাধ্য হন।[২]
অভিযোগ ও তদন্ত
সম্পাদনাঅঞ্জনা মিশ্র পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি ৯ তারিখে ভুবনেশ্বরের উপকণ্ঠে বারঙ্গ-এর কাছে তার গাড়ি থামিয়ে তিন ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেছে। অঞ্জনা মিশ্র এবং তার সাংবাদিক বন্ধু ভুবনেশ্বর থেকে কটকের দিকে একটি গাড়ীতে ভ্রমণ করছিলেন। গাড়ীতে ড্রাইভার ছিল। ভুবনেশ্বরের উপকণ্ঠে বারঙ্গ এর কাছে একটি স্থানে তাদের গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রধারী তিন জন ব্যক্তি ড্রাইভারকে জঙ্গলে নির্জন স্থানে গাড়ি নিয়ে যেতে বাধ্য করে। অতঃপর অঞ্জনা মিশ্রকে তার বন্ধুর উপস্থিতিতে সম্মিলিতভাবে প্রায় চার ঘণ্টা যাবৎ ধর্ষণ করা হয় ।[৩]
তদন্ত ও অভিযোগ গঠন
সম্পাদনাঅভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তক্রমে পুলিশ তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে। এরা হলো বিবেকানন্দ বিসওয়াল, প্রদীপ সাহু ও ধীরেন্দ্র মোহান্তী। প্রথমে প্রদীপ সাহুকে আটক করা সম্ভব হয়। পুলিশ পরে ধীরেন্দ্র মোহান্তীকে ১৯৯৯ সালের ২৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এদের বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়।
জুডিশিয়াল এনকোয়ারী
সম্পাদনাওড়িশা সরকার এ বিষয়ে জুডিশিয়াল এনকোয়ারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদার করা হয়। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি ওড়িশা হাইকোর্ট আইনী তদন্তের জন্য মামলাটি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) কাছে হস্তান্তরের আদেশ প্রদান করে।
সিবিআই-এর অভিযোগনামা
সম্পাদনাসিবিআই মামলাটি গ্রহণ করে এবং ১৯৯৯ সালের ৫ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন সহ অভিযোগনামা (চার্জশিট) দাখিল করে। অভিযোগনামায় আসামী বিবেকানন্দ বিসওয়াল, প্রদীপ সাহু ও ধীরেন্দ্র মোহান্তীর বিরূদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দাখিল করে।[৪]
বিচার ও রায়
সম্পাদনাদীর্ঘ লড়াইয়ের পর অঞ্জনা মিশ্র তার মামলা জিতেছিলেন। ২০০২ সালের ২৯ এপ্রিল প্রদত্ত এক রায়ে, ওড়িশার জেলা ও দায়রা জজ, খুরদা, এই মামলার তিন আসামির মধ্যে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বিচারক মহেন্দ্র নাথ পট্টনায়ক প্রদীপ সাহু এবং ধীরেন্দ্র মোহান্তিকে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি ৯ এর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করেন, যদিও একজন অভিযুক্ত এখনও পলাতক।[৫]
প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাবিষয়টি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন অঞ্জনা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জে. বি. পাটনায়েক এবং তার বন্ধু প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল ইন্দ্রজিৎ রায়কে অভিযুক্ত করেন যে তারাও এই বিষয়ে জড়িত।[১] জনতার উত্তাল বিক্ষোভের মুখে জে বি পাটনায়েকমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিচারের রায় হওয়ার পর অঞ্জনা মিশ্র দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে মূল আসামী বিবেকানন্দ বিসওয়াল পলাতক রয়ে গেল, তাকে আটক করা সম্ভব হয় নি। তার মতে, বিবেকানন্দ বিসওয়ােই মূল ষড়যন্ত্রকারী।
চৌধার সার্কেল কারাগারে ধীরেন্দ্র মোহান্তী এখনো দণ্ড খাটছে। ২০২০-এর ফেব্রুয়ারিতে ছড়পদ বিশেষ কারাগরে অন্তরীণ প্রদীপ সাহুর মৃত্যু হয়।
দুই যুগ পর বিবেকানন্দ বিসওয়াল গ্রেপ্তার
সম্পাদনা১৯৯৯ সালে গণধর্ষণ এবং ২০০২ সালে মামলার রায়ের দুই যুগেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে পলাতক আসামী বিবেকানন্দ বিসওয়াল পুলিশেল বিশেষ অভিযানে ধরা পড়ে।[৬]
পূর্বে করা ধর্ষণ চেষ্টা
সম্পাদনা১২ জুলাই ১৯৯৭ তারিখে অঞ্জনা মিশ্র আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি অভিযোগপত্র লিখেছিলেন যে ১১ জুলাই তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল ইন্দ্রজিৎ রায় তাকে তার অফিস ও বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং গোপনীয় ফোন পাওয়ার অজুহাতে তাকে তার কাছে শয়নকক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। তিনি ১৯ জুলাই ২০০০ সালে, কটক ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি প্রথম তথ্য প্রতিবেদন () দাখিল করেন কিন্তু কোন আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি॥ অঞ্জনা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ রায়কে রক্ষা করার অভিযোগ আনেন। একটি সিবিআই আদালত ধর্ষণের চেষ্টার জন্য ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রায়কে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ J.B. Patnaik। "Why should I apologise to Anjana?"। The Week। The Week। 22 मई 2012 তারিখে মূল (Interview) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 1 जून 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ প্রধান আসামী গ্রেপ্তার
- ↑ ANJANA MISHRA (7 फ़रवरी 1999)। "My story"। The Week। The Week। 22 मई 2012 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 1 जून 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "One held for alleged rape of Anjana Mishra"। Rediff on the net। UNI। সংগ্রহের তারিখ 1 जून 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Anjana Mishra Solidarity Committee, Hyderabad (जनवरी 1999)। "FROM THE FRYING PAN INTO THE FIRE"। Select Committee on International Development Minutes of Evidence:Parliamentary copyright 1999। Womankind Worldwide। 9 मार्च 2012 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 1 जून 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Prime accused in sensational Odisha gang-rape case nabbed