অক্ষরধাম মন্দির জঙ্গিহানা

২০০২ সালের ইসলামী সন্ত্রাসী ঘটনা

২০০২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের গুজরাত রাজ্যের রাজধানী গান্ধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরে একটি জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটে।[][] মুর্তাজা হাফিজ ইয়াসিন ও আশরাফ আলি মোহাম্মেদ ফারুক নামে দুই জঙ্গি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও হ্যান্ড গ্রেনেডের সাহায্যে এই হামলা চালিয়েছিল। এই জঙ্গিহানায় ৩৩ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হয়েছিলেন।[] জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে দুই জঙ্গিকে হত্যা করে। পরে গুজরাত পুলিশ আরও ছয় জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এই ছয় জন সন্দেহভাজনকে বেকসুর খালাস করে দেয়।

অক্ষরধাম মন্দির জঙ্গিহানা
আক্রান্ত অক্ষরধাম মন্দির চত্বর
অক্ষরধাম গুজরাট-এ অবস্থিত
অক্ষরধাম
অক্ষরধাম
গুজরাতের মানচিত্রে জঙ্গিহানার স্থান
স্থানগান্ধীনগর, গুজরাত, ভারত
স্থানাংক২৩°১৩′৪৫″ উত্তর ৭২°৪০′২৭″ পূর্ব / ২৩.২২৯১৭° উত্তর ৭২.৬৭৪১৭° পূর্ব / 23.22917; 72.67417
তারিখ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০২–২৫ সেপ্টেম্বর ২০০২ (2002-09-25)
বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট - সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট (ভারতীয় প্রমাণ সময়)
হামলার ধরনবোমাবিস্ফোরণ, গুলিচালনা
ব্যবহৃত অস্ত্রগ্রেনেড, একে-৪৭
নিহত৩২ (দুজন অপরাধী সহ)[]
আহতঅন্তত ৮০[]
হামলাকারীলস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মোহাম্মেদ[]
অপরাধীগণ২, মুর্তাজা হাফিজ ইয়াসিস্ন ও আশরাফ আলি মোহাম্মেদ ফারুক[]
রক্ষাকারীগণগুজরাত পুলিশজাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী

ঘটনাক্রম

সম্পাদনা
  1. ২০০২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট নাগাদ একটি সাদা গাড়ি দুজন জঙ্গিকে অক্ষরধাম মন্দির চত্বরের ৩ নং দরজায় নামিয়ে দেয়। এদের বয়স ছিল ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। এদের হ্যাভারশ্যাক ও জ্যাকেটে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও গ্রেনেড ছিল।[]
  2. জঙ্গি দুজন মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের নিরাপত্তা স্ক্রিনিং-এর জন্য থামায়।[]
  3. স্ক্রিনিং এড়িয়ে জঙ্গিরা সাত ফুট উঁচু বেড়ার উপর দিয়ে ঝাঁপ মারে এবং চত্বরে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করে।[]
  4. জঙ্গিহানায় সাধারণ নাগরিকরা নিহত ও আহত হতে থাকেন। একজন পুরোহিত পরে জানিয়েছিলেন, "এক মা তাঁর সন্তানদের জন্য প্রাণভিক্ষা চাইছিলেন। এদের পরে শনাক্ত করা হয় প্রিয়া চৌহান ও ভাইলু চৌহান নামে। এদের বয়স ছিল যথাক্রমে তিন ও চার। এদের মায়ের নাম ছিল সুমিত্রা। পায়ে গুলি লাগায় তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। জঙ্গিরা তাঁর আর্জি শুনে মাথা নাড়ালো। তারপর তাঁর সামনেই তাঁর সন্তানদের দিকে বন্দুক তাক করে তাদের হত্যা করল।"[]

মূল মন্দিরে অণুপ্রেবেশের চেষ্টা

সম্পাদনা
  1. জঙ্গিরা মন্দির চত্বরের কেন্দ্রীয় পথটি ধরে নিকটস্থ বইয়ের দোকানে জড়ো হওয়া দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের উপর গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে যেতে থাকে। তারপর মূল মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয় হ্যান্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে ছুঁড়তে।[]
  2. অক্ষরধামের কর্মচারীরা (যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মন্দিরের সুপারভাইজার খোদস্নিহ যাদব) এই গুলিচালনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তারা ২০০ ফুট দীর্ঘ পথটি পেরিয়ে এসে মূল মন্দিরের ১৫ ফুট দীর্ঘ দরজাগুলি বন্ধ করে দেন।[]
  3. এর ফলে জঙ্গিরা মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেনি। মূল মন্দিরে সেই সময় ৩৫ জন প্রার্থনা করছিলেন।[]
  4. বিকেল ৪টে ৪৮ মিনিটে (জঙ্গিহানা শুরু হওয়ার তিন মিনিট পর) অক্ষরধাম মন্দির চত্বর থেকে বিশ্ববিহারী স্বামী তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দ্রুত সাহায্য পাঠানোর আবেদন জানান।[]
  5. কয়েক মিনিটের মধ্যেই গান্ধীনগজের জেলা পুলিশ প্রধান আর. আর. ব্রহ্মভট্ট মন্দিরের পথে রওনা হন। সেই সঙ্গে স্টেট কম্যান্ডো ফোর্সকেও আদেশ দেওয়া হয় মন্দিরে উপস্থিত হওয়ার জন্য।[]
  6. এদিকে অক্ষরধাম মন্দির চত্বরের বাইরে স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা নেন। চিরাগ প্যাটেল আহতদের বের করে আনতে সাহায্য করেন। প্রবীণ শাহ তাদের সন্ত্রস্ত আত্মীয়দের বিনামূল্যে পানীয় জল সরবরাহ শুরু করেন।[]

লক্ষ্য পরিবর্তন

সম্পাদনা
  1. মূল স্মারকস্থলে ঢুকতে না পেরে এরপর জঙ্গিরা লক্ষ্য পরিবর্তন করে চলে যায় প্রদর্শনী হলের দিকে। স্বেচ্ছাসেবকরা সেই হলের সব কটি দরজা তালাবন্ধ করে রেখেছিলেন। জঙ্গিরা অবশ্য বের হওয়ার দরজাটির মাধ্যমে প্রথম প্রদর্শনী হলে ঢুকে পড়ে। এখানে মাল্টিমিডিয়া শো চলছিল।[]
  2. হলে ঢুকে জঙ্গিরা দর্শকদের উপর গুলি বৃষ্টি শুরু করে। এর ফলে মহিলা ও শিশু সহ অনেক জন আহত ও নিহত হয়। মিহির (বয়স ৭), মৌলিক (বয়স ৪) ও মৃণাল (বয়স ৫) তাদের ঠাকুমা-দাদু পুণ্ডরিকভাই ও হর্ষিদাবেন হাথির সঙ্গে অক্ষরধামে মাল্টিমিডিয়া শো দেখতে এসেছিল। জঙ্গিদের গুলিতে মিহির ও মৃণাল তাদের ভাই মৌলিক ও ঠাকুমা-দাদুকে হারায়।[]
  3. বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট নাগাদ নরেন্দ্র মোদি উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীকে দিল্লিতে ফোন করেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (এনএসজি, সাধারণত ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডো নামে পরিচিত) জন্য আবেদন করেন।[]
  4. জঙ্গিরা বের হওয়ার দরজা দিয়েই প্রথম প্রদর্শনী হল ছেড়ে বেড়িয়ে উপরে উঠে মন্দিরের বাইরের সীমা পরিক্রমায় লুকিয়ে পড়ে। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Dasgupta, Manas (১ জুন ২০১০)। "Death sentence for Akshardham temple attack convicts upheld"The Hindu। Ahmedabad। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৩ 
  2. "Gujarat HC upholds death sentence for Akshardham attackers"The Economic Times। ২ জুন ২০১০। ২৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৪ 
  3. Williams, Raymond (২০০৪)। Williams on South Asian Religions and Immigration: Collected Works। England: Ashgate। আইএসবিএন 0754638561 
  4. "Temple Carnage: Terrorist Attack on Akshardham"Swaminarayan.org 
  5. Williams, Raymond Brady (২০০৪)। Williams on South Asian Religions and Immigration: Collected Works। England: Ashgate। আইএসবিএন 0754638561 
  6. "Temple Carnage: Terrorist Attack on Akshardham"। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৪ 
  7. Malik, Ashok; Mahurkar, Uday; Unnithan, Sandeep (৭ অক্টোবর ২০০২)। "Terrorism's New Strategy"India Today। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা